অন্যান্য

স্যাট (SAT) কি, কেন ও কাদের জন্য?

স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীদের কাছে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে যাবো মানেই একটি রঙিন স্বপ্ন। বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে ভর্তি হওয়ার সময় শিক্ষার্থীদের নানান ভোগান্তি পোহাতে হয়। প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিতে হয়। আর সেখানে যদি প্রশ্ন আসে স্নাতক পর্যায়ের জন্য বাইরের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র বা কানাডা, তাহলে তো কথাই নেই। কিন্তু এই কঠিন ব্যাপারটিকেই সহজ করে দিয়েছে স্যাট (SAT)। হ্যা, কারণ স্যাট পরীক্ষার মাধ্যমেই এইচএসসি এর পরে যুক্তরাষ্ট্র বা কানাডার বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে পড়তে যাওয়া সম্ভব এবং সেটা বাংলাদেশে বসেই পরীক্ষা দিয়ে। চলুন তাহলে স্যাট সম্পর্কে বিস্তারিত সব জেনে নেই।

স্যাট (SAT) কি এবং কাদের জন্য?

স্যাট (SAT = Scholastic Assessment Test) হলো বিদেশে আন্ডারগ্র্যাজুয়েট পড়তে যাওয়ার জন্য প্রথম পছন্দ যাদের যুক্তরাষ্ট্র বা কানাডা, তাঁদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি পরীক্ষা। এই পরীক্ষা যাচাই করে যে, এসএসসি ও এইচএসসি পাস করার পর একজন শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে শিক্ষা গ্রহণের জন্য কতখানি তৈরি হলো। যুক্তরাষ্ট্রের বা কানাডার বেশির ভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সময় বাধ্যতামূলক ভাবে আবেদনপত্রের সঙ্গে স্যাট স্কোর জমা দিতে হয়। শুধু তাই নয় বিদেশে পড়তে যাওয়া মানেই অনেক টাকার ব্যাপার। তাই যে কেউ চাইলেই যেতে পারে না। তবে, বৃত্তি বা আর্থিক অনুদান পেলে যে কেউ বিদেশে গিয়ে পড়তে পারে। এই বৃত্তি বা আর্থিক অনুদান পেতেও লাগবে স্যাট। যেই বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে বৃত্তি বা আর্থিক অনুদান দিয়ে থাকে তা পেতে গেলে অবশ্যই চাহিদামত ন্যূনতম SAT স্কোর লাগে।

স্যাটের অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে (www. collegeboard.org)

স্যাট (SAT) পরীক্ষা কাঠামো

৩ ঘন্টার কাগজে কলমের পরীক্ষা এটি। কিন্তু অপশনাল হিসেবে যেই Essay সেকশন রয়েছে সেটায় অংশ নিলে মোট সময়ের সাথে আরও ৫০ মিনিট যোগ হয়। এই Essay সেকশনটি আগে বাধ্যতামূলক থাকলেও এখন এটি অপশনাল। এখানে মনে রাখা দরকার যে, অপশনাল দিবো কি দিবো না? কারণ, মূল স্যাট স্কোর এবং রচনার স্কোর আলাদা ভাবে হিসাব করবে। দুইটিকে একসঙ্গে হিসাব করা হবে না। আরেকটি বিষয় হলো সব বিশ্ববিদ্যালয় স্যাট চায় না। কাজেই কোথায় কোথায় আবেদন করবেন তা ঠিক করে তারপর ঐ বিশ্ববিদ্যাল গুলোর রিকোয়ারমেন্ট দেখে সিদ্ধান্ত নিলে ভালো। এক্ষেত্রে উক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে Essay লাগবে কিনা তা- [school name] SAT essay requirement লিখে গুগলে সার্চ করলে চলে আসবে।

স্যাটের মোট নাম্বার ২৪০০ এবং প্রতিটি সেকশনে ৮০০ নম্বর থাকবে। তবে এর সাথে অপশনাল হিসেবে থাকবে Essay রাইটিং। এটার জন্য আলাদাভাবে ৬-২৪ স্কেলে নাম্বার দেয়া হবে। সর্বনিম্ন স্কোর ৬০০ এবং সর্বোচ্চ স্কোর ২৪০০ ধরা হয়।

৩টি সেকশনে স্যাট পরীক্ষা নেওয়া হয়-

ম্যাথম্যাটিকস

এই সেকশনের ৩টি সাব সেকশন আছে। ২টি ২৫ মিনিট করে আরেকটি ২০ মিনিট এর। কিছু বড় ক্যালকুলেশনও থাকতে পারে তাই সায়েন্টিফিক ক্যালকুলেটর এর অনুমতি আছে।

প্রথম সাব সেকশন – ২৫ মিনিটের এই সাব-সেকশনে শুধু Multiple Choice এ ভরা। ২০টা MCQ এর মতো প্রশ্ন থাকবে কিন্তু প্রতিটি ভুল উত্তরের জন্য নম্বর মাইনাস হবে। অর্থাৎ নেগেটিভ মার্কিং থাকবে।

দ্বিতীয় সাব সেকশন – ২৫ মিনিটের এই সেকশনে ৮টা MCQ ও ১০টা GRID-IN টাইপ প্রশ্ন থাকবে। ভয়ের কিছু নেই। গ্রিড-ইন বলতে উত্তর লেখার জায়গা (ঘর বা গ্রিড) থাকবে, ওখানে উত্তর লিখতে হবে। এখানে কোনো নেগেটিভ মার্কিং নেই।

তৃতীয় সাব সেকশন – ২০ মিনিটের এই সেকশনে ১৬টা প্রশ্ন, সব গুলোই MCQ।

ক্রিটিকাল রিডিং

এখানেও ৩টি সাব সেকশন আছে। ২টা ২৫ মিনিট ও একটা ২০ মিনিট এর। প্রতিটি সেকশনে Sentence Completion (শূন্যস্থান পূরণ- একটি গ্যাপ, পাঁচটি অপশন, একটি সঠিক উত্তর বাছাই করতে হবে) এবং Reading Comprehension (পেসেজ থাকবে এবং এর সঙ্গে জড়িত প্রশ্নের উত্তর করতে হবে)।

রাইটিং

এখানে চার রকম ভাবে প্রশ্ন করা হবে-

Identification of Sentence Errors – এটাতে একটি লাইনের ৫ জায়গায় আণ্ডারলাইন করা থাকবে এবং কোনটার মধ্যে ভুল আছে (গ্রামাটিক্যাল মিস্টেক) খুঁজে বের করতে হবে।

Sentence Correction – এটি আগেরটির মতোই কিন্তু এখানে আন্ডারলাইন করা থাকবে এক জায়গাতেই এবং আন্ডারলাইন করা জায়গাটা পাঁচ রকম করে বলা থাকবে। সঠিক কোনটি সেটা বাছাই করতে হবে।

Editing in Context – একটা পুরো প্যাসেজ পড়তে হবে। সেই প্যাসেজের মধ্যে থেকে মাঝে মাঝে কিছু লাইন বা শব্দ দেখিয়ে জানতে চাবে- ঐ শব্দ বা লাইনটি ব্যবহার না করে কোন শব্দ বা লাইনটি ব্যবহার করলে বেশি ভালো হবে। অপশনও দিবে, সেখান থেকে সিলেক্ট করতে হবে।

Essay Writing– কোনো বিষয়ের উপর রচনা লিখতে দিবে এবং কোন জিনিস গুলো থাকতে হবে রচনার মধ্যে তা বলে দিবে।

কিভাবে রেজিস্ট্রেশন করবো?

এর জন্য প্রথমেই স্যাটের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে (www.collegeboard.org) গিয়ে কলেজবোর্ড অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে। তারপর নির্দিষ্ট ফি জমা দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। ৯২ ডলার খরচ পরবে যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় সাড়ে সাত হাজার টাকা। পরীক্ষার কমপক্ষে ১মাস আগে রেজিস্ট্রেশন করতে হয়। রেজিস্ট্রেশনের জন্য যা প্রয়োজন হবে-

  • পাসপোর্ট
  • পিপি ছবির ডিজিটাল কপি
  • পাসপোর্ট ছাড়া অন্য কোরো ধরনের শনাক্তকারী পরিচয়পত্র গ্রহণযোগ্য হবে না।

স্যাট পরীক্ষার জন্য রেজিস্ট্রেশন করলে প্রত্যেক পরীক্ষার্থীকে একটি করে অ্যাডমিশন টিকেট দেয়া হয়। এই অ্যাডমিশন টিকেট হলো পরীক্ষার্থীর রেজিস্ট্রেশন করার প্রমাণ পত্র। রেজিস্ট্রেশনের পেমেন্ট সম্পূর্ণ করার পর একটা নতুন পেইজ আসবে। এই পেইজটি-ই অ্যাডমিশন টিকেট । টিকেটটি প্রিন্ট করে নিতে হবে। অ্যাডমিশন টিকেটের মধ্যে যা যা থাকবে-

  • Student photo
  • Student personal information
  • Test day info
  • Notes for students
  • Supervisor instructions

পরীক্ষা কখন ও কোথায় হয়?

বাংলাদেশে ৬টি জায়গায় স্যাট পরীক্ষা হয়ে থাকে। এর মধ্যে ৪টি রাজধানী ঢাকায় এবং বাকি ২টি চট্টগ্রামে অবস্থিত। সাধারণত জানুয়ারি, মে, জুন, অক্টোবর, নভেম্বর এবং ডিসেম্বরে স্যাট পরীক্ষা হয়ে থাকে।

বাতিল করবেন কিভাবে ?

কেউ যদি কোনো স্যাট রেজিস্ট্রেশনের পর পরীক্ষা বাতিল করতে চায় সেক্ষেত্রে তাকে কিছু বিষয় মনে রাখতে হবে। যেমনঃ

পরীক্ষা বাতিল করলে কলেজ র্বোড কেবল ১০ ডলার ক্রেডিট কার্ডে ফেরত পেতে পারে। বাকী টাকা আর ফেরত পাবে না। যদি পুনরায় স্যাট পরীক্ষা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়, তবে স্যাট পরীক্ষার (৩ টি সেকশন) জন্য ৪৭.৫০ ও Essay রাইটিং অংশের পরীক্ষা দিলে মোট ৬৪.৫০ ডলার খরচ করতে হবে।

কিন্তু কেউ যদি পরীক্ষা বাতিল (Cancel) না করে তারিখ পেছাতে (Reschedule) চায় তবে অতিরিক্ত ২৮ ডলার খরচ করতে হবে। তাই ভেবে চিন্তে সিদ্ধান্ত নেওয়াই ভালো।

স্যাটের (SAT) পরীক্ষার জন্য কি ভাবে প্রস্তুতি নিবেন?

পরীক্ষা মানেই প্রস্তুতি, প্রস্তুতি মানেই একটি পরিকল্পনার মধ্য দিয়ে যাওয়া। যেহেতু বছরের বিভিন্ন সময়ে স্যাট পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ থাকে তাই পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রস্তুতি নেওয়াই ভালো এবং সে অনুযায়ী সময় নির্বাচন করা উচিৎ। শুরুতেই স্যাট-বিষয়ক বইগুলো থেকে একটি প্র্যাকটিস টেস্ট দিয়ে নেওয়া ভালো। এতে করে বর্তমান অবস্থা বোঝা যাবে। প্রাথমিক স্কোরটি বুঝে পরবর্তী প্রস্তুতির পরিকল্পনা নিলে ভালো হবে। স্যাটে ভালো স্কোর করার জন্য কোচিং ছাড়াও চাইলে ঘরে বসেও প্রস্তুতি নেওয়া সম্ভব। এর জন্য দরকার নিয়মিত অনুশীলন ও অধ্যবসায়। ইংরেজীতে দক্ষতা বাড়ানোর জন্য নিয়মিত ইংরেজী বই পত্রিকা পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।

স্যাটের জন্য সহায়ক কিছু বই-

  • অফিশিয়াল স্যাট স্টাডি গাইড
  • ব্যারন’স, প্রিন্সটন রিভিউ
  • কাপলান
  • গ্রুবার’স
  • ম্যাকগ্র-হিল ইত্যাদি।

প্রিয় ভিজিটর, এখানে উপস্থাপিত সকল তথ্য উপাত্ত অভিজ্ঞ লোক দ্বারা ইন্টারনেট থেকে সংগ্রহিত । উল্লেখিত কোন তথ্যের ভুল যদি আপনার নিকট দৃশ্যমান হয় তবে অতিসত্ত্বর তা আমাদের ইমেইলের ([email protected]) মাধ্যমে অবহিত করার জন্য অনুরোধ করছি।

১টি মতামত

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back to top button
error: কন্টেন্ট সংরক্ষিত !!