বিদেশে উচ্চশিক্ষা

জিআরই নিয়ে বিস্তারিত। জি আর ই কী এবং কাদের জন্য?

স্নাতক, স্নাতকোত্তর কিংবা উচ্চ মাধ্যমিকের গন্ডি পেরিয়েই অনেকের ইচ্ছা থাকে দেশের বাইরে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করার।স্বপ্ন থাকে পছন্দের তালিকায় থাকা প্রথম সারির দেশ গুলোর যেকোন একটিতে যেয়ে স্কলারশীপ নিয়ে বাকি পড়াশোনা শেষ করার, আবার কারো কারো তো নির্ধারিত দেশই থাকে যেখানে তারা পরবর্তী উচ্চ শিক্ষা জীবনের দিন গুলো স্বপ্নে দেখে, যে স্বপ্ন গুলো তাদের জাগিয়ে রাখে। কারো স্বপ্নে হয়তো  ম্যসাচুসেটসের রাতের শহর লাল নীল বাতি গুলো উকি দেয়। স্বপ্ন যার যেমনই হোক পূরণ করতে প্রায় সবারই এক নির্দিষ্ট পথ ধরে এগোতে হয় স্বপ্নের পথে।হতে পারে এই পথের প্রথম ধাপ জি আর ই। হ্যা এরই ধারাবাহিকতায় আজ জানবো জিআরই নিয়ে বিস্তারিত।

এক নজরে জিআরই
  • পরীক্ষার নাম – জিআরই
  • পরীক্ষা পদ্ধতি – কম্পিউটার বেজড + পেপার ডেলিভার্ড
  • আবেদন ফি – ২০৫ ইউএস ডলার
  • পরীক্ষার বিষয় –
    1. এনালাইটিকাল রাইটিং (রচনা)
    2. ভার্বাল রিজোনিং (ইংরেজি)
    3. কোয়ান্টিটেটিভ রিজোনিং (গণিত)

GRE Syllabus 2021 - List of topics in GRE General and Subject syllabus

 

জিআরই কি এবং কাদের জন্য?


Graduate Record Examination-কে সংক্ষেপে GRE বলে। এটি একটি সম্পূর্ণ কম্পিউটারাইজড পরীক্ষা। যা অনার্স শেষ করার পর অনেক দেশের অনেক ইউনিভার্সিটিতে মাস্টার্স বা পিএইচডি করার জন্য প্রয়োজন।
বর্তমানে আমাদের দেশের শিক্ষার্থীদের মাঝে অনার্স শেষ করে বাইরের দেশে পড়তে যাওয়ার প্রবণতা অনেক বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু আমাদের দেশের এডুকেশন সিস্টেম অন্য দেশের এডুকেশন সিস্টেম থেকে ভিন্ন হবে এটাই স্বাভাবিক। দেশ, বিশ্ববিদ্যালয় ভেদে পড়াশোনার মান এবং ইভালুয়েশন পদ্ধতি ভিন্ন হয়। অনেক ইউরোপিয়ান ইউনিভার্সিটির জন্য শুধুমাত্র সিজিপিএ আর IELTS/TOEFL স্কোর হলেই চলে। কিন্তু আমেরিকা, কানাডার ইউনিভার্সিটিগুলো সহ আরো বেশ কিছু দেশের ইউনিভার্সিটি শুধু সিজিপিএ দ্বারা যোগ্যতা পরিমাপ করে না। পৃথিবির বিভিন্ন দেশ থেকে আসা, বিভিন্ন ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে আসা শিক্ষার্থীদের একটি অভিন্ন মানদন্ডে তারা পরিমাপ করে। সবার জন্য একটি কমন পরীক্ষা যেমন- GRE দ্বারা মেধার যোগ্যতা বিচার করে । এখানে ইংরেজি বা গণিতে লেখার দক্ষতা যাচাই করা হয়না; এই পরীক্ষার মাধ্যমে মূলত বিশ্লেষণ করার ক্ষমতা যাচাই করা হয়।
পৃথিবীর একেক ইউনিভার্সিটির সিজিপিএ দৃষ্টিভঙ্গি একেক রকম। তাই তাদের জন্য এটা বেশ সুখবর যাদের সিজিপিএ কম। কারণ তারা এখানে নিজের যোগ্যতা প্রমাণের আরো একটা সুযোগ হচ্ছে GRE এর মাধ্যমে। প্রধানত Science এবং Arts ব্যকগ্রাউন্ড এর শিক্ষার্থীদের GRE লাগে। Commerce ব্যকগ্রাউন্ডের জন্য লাগে GMAT।



জিআরই প্রশ্ন কাঠামোঃ


জিআরই পরীক্ষা ৩ ভাগে নেওয়া হয়ে থাকে-
i. এনালাইটিকাল রাইটিং (Analytical Writing-রচনা)
ii. ভার্বাল রিজোনিং (Verbal Reasoning- ইংরেজি)
iii. কোয়ান্টিটেটিভ রিজোনিং (Quantitative Reasoning- গণিত)


i. এনালাইটিকাল রাইটিংঃ সময় ১ ঘণ্টা, মানে ৬০ মিনিট। এই সময়ে ইস্যু এবং আরগুমেন্টিভ এই দুই ধরনের রচনা লিখতে হবে। ৩০ মিনিট সময় বরাদ্দ থাকে প্রতি সেকশনে। ১ থেকে ৬ স্কেলে নাম্বার দেওয়া হয়। যেহেতু এটি রাইটিং পার্ট এখানে ইংরেজিতে লেখার এবং ধারণাগুলো পরিষ্কারভাবে উপস্থাপনের দক্ষতা ভালো হলে রাইটিংয়ে সহজেই ৩.৫ – ৪ পাওয়া সম্ভব।

ii. ভার্বাল রিজোনিংঃ এই টেস্টের মাধ্যমে পরীক্ষার্থীর ইংরেজী শব্দ ও বাক্যের উপর দক্ষতা পরীক্ষা করা হয়। এর মূল ভিত্তি ভোকাবুলারি। যার ভোকাবুলারি যত ভালো তার জন্য ততই সহজ হবে। এখানে মূলত তিন ধরণের প্রশ্ন আসে-

        • Text Completion- শূন্যস্থান পূরণে একটি, দুটি বা তিনটি ব্ল্যাংক থাকতে পারে।
        • Sentence Equivalence- সমভাববাহী শব্দ দিয়ে সমান ভাবধারী বাক্য তৈরীকরণ (একটি ব্ল্যাংক থাকবে যেখানে দুটি আলাদা শব্দ বসতে পারে)
        • Reading Comprehension- প্যাসেজ পড়ে তার অর্থ অনুধাবন (মাল্টিপল চয়েস প্রশ্ন থাকবে যেখানে একটি মাত্র সঠিক; এক/একাধিক সঠিক এবং প্যাসেজের মধ্যে ক্লিক করে উত্তর নির্বাচন এরকম প্রশ্ন থাকবে)

iii.কোয়ান্টিটেটিভ রিজোনিংঃ এটিকে ম্যাথ পার্টও বলা হয়। এই পার্টে সাধারণত কলেজ লেভেলের (এইচ এসসি/সমমান) অংক আসে। তবে ত্রিকোণমিতি থেকে অংক থাকে না। এখানেও দুইটি ধাপ রয়েছে।

ভার্বালের নম্বর ১৭০ এবং কোয়ান্টিটেটিভের নাম্বর ১৭০ করে সর্বমোট ৩৪০ এবং প্রতিটি ভাগে দুই সেট করে প্রশ্ন আসে। ভার্বালে ১ ঘন্টা অর্থাৎ ৩০ মিনিট সময়ে দুই সেকশনে ২০টি করে সর্বমোট ৪০টি প্রশ্ন দেওয়া হয়। অন্যদিকে কোয়ান্টিটেটিভে একই সংখ্যক প্রশ্নের জন্য ৩৫ মিনিট করে সর্বমোট ৭০ মিনিট দেওয়া হয়। প্রতিটি প্রশ্নের মান ধরা হয় ১।অনেক সময় অতিরিক্ত সেট হিসেবে ভার্বাল কিংবা কোয়ান্টিটেটিভ থেকে প্রশ্ন দেওয়া হতে পারে– যেটার জন্য কোনো স্কোরিং হয় না। যেহেতু বোঝার কোনো রাস্তা নেই যে, কোন সেকশনে স্কোরিং করা হয় না, তাই প্রতিটি সেকশনই খুব ভালোভাবে দিতে হবে।

জিআরই পরীক্ষা পদ্ধতিঃ


প্রচলিত পরীক্ষা পদ্ধতির সাথে জিআরই-র কিছু পার্থক্য রয়েছে। প্রচলিত পরীক্ষা হয় কাগজ কলমে, আর জিআরই পরীক্ষা হয় কম্পিউটারে। সনাতন পরীক্ষায় বোঝা যায় কোন প্রশ্নের জন্য কত মার্কস। কিন্তু জিআরই-এ ঠিক এভাবে জানা যায় না। এখানে কম্পিউটার সামগ্রিক পারফর্ম্যান্স বিবেচনা করে একটি স্কোর দেয় যেটি নির্দিষ্ট নিয়ম বা সূত্র মেনে চলে। যেমন- যেহেতু এখানে একটি ভার্বাল ও একটি ম্যাথ পার্ট থাকে, একটিতে পারফর্ম্যান্স ভালো হলে পরেরটি কঠিন হয় এবং বিপরীতক্রন। জিআরই পরীক্ষার হলে সবাইকে আলাদা আলাদা কম্পিউটারের সামনে বসিয়ে দেওয়া হয় এবং কক্ষপরিদর্শক বা ইনভিজিলেটররা বাইরের রুমে থাকেন। প্রত্যেক পরীক্ষার্থীর কর্মকাণ্ড তারা ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরায় দেখতে পারেন। 

জিআরই পরীক্ষার আবেদন


জিআরই এক্সামের জন্য রেজিস্ট্রেশন করতে প্রথমে অফিশিয়াল সাইট এ যেয়ে ETS account খুলতে হবে। একাউন্ট খোলার পর জিআরই জেনারেল টেস্ট দিতে চান নাকি জিআরই সাবজেক্ট টেস্ট দিতে চান তা ঠিক করতে হবে। এরপর এক্সাম ডেট এবং সেন্টার সিলেক্ট করতে হবে। সিট বুকিং এর কাজ হয়ে গেলে পেমেন্ট পেজ আসবে। অনলাইনে ইন্টারন্যাশনাল ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে ফি ২০৫ ইউএস ডলার পরিশোধ করতে পারবেন। 

 

জি.আর.ই পরীক্ষার ফি

  • জিআরই জেনারেল টেস্ট ফি ২০৫ ইউএস ডলার
  • জিআরই সাবজেক্ট টেস্ট ফি ১৫০ ইউএস ডলার
  • লেট রেজিস্ট্রশন ফি ২৫ ইউএস ডলার
  • স্ট্যান্ডবাই টেস্টিং ২৫ ইউএস ডলার
  • রিশিডিউল ফি ৫০ ইউএস ডলার

বিভিন্ন দেশের প্রথম সারির বিশ্ববিদ্যালয় গুলো

MIllennials at work : Stock Photo

জি আর ই প্রস্তুতি ও টিপস


জিআরই বেশি বই কিংবা পান্ডিত্যপূর্ণ বই পড়া নয় এটি হচ্ছে কৌশলের পরীক্ষা যাকে জয় করা যায় কেবল ভালো বেসিক বা ফাউন্ডেশন দিয়ে।
ক্যাপাসিটি বনাম ক্যাপাবিলিটির প্রশ্নে আসলে জিআরই এর জন্য দরকার ক্যাপাবিলিটি। যদি বেসিক ঠিক না করে সরাসরি জিআরই এর বইগুলো পড়া শুরু করে তাহলে বুঝতে হবে সে ক্যাপাসিটি থিওরির ফলোয়ার। অন্যদিকে যদি প্রথমে নিজের বেসিক ঠিক করার পর বইয়ের দিকে নজর দেয় তাহলে বুঝতে হবে সে ক্যাপাবিলিটি থিওরির ফলোয়ার।
জিআরই প্রস্তুতির জন্য নির্দিষ্ট কোনো বই নেই যা পরীক্ষায় কমন পাওয়ার ১০০% নিশ্চয়তা দিবে। বিভিন্ন প্রকাশনীর বই পাওয়া যায়। এসবের মধ্যে ম্যানহাটান, ব্যারনস, ইটিএস এর অফিসিয়াল জিআরই বই। কাপলানের, নোভা ম্যাথ বাইবেল, খাইরুল’স বেসিক ম্যাথ বইগুলোর চাহিদা বেশ রয়েছে। এছাড়াও কিছু ওয়েবসাইট আছে যেমন- magoosh, cruncprep, prepscholar ইত্যাদি যা জিআরইর প্রস্তুতিতে সাহায্য করে। এই ওয়েব সাইট গুলোতে জিআরই প্রস্তুতি সহায়ক ভিডিও এবং প্রশ্ন সম্ভার থাকে।
মোট কথা হলো মূল প্রস্তুতি হবে, যেকোনো সমস্যা অতি সহজে সমাধান করার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করা। আর এজন্য ভার্বাল এবং কোয়ান্টিটেটিভ সেকশনের বিভিন্ন টপিকের উপর দখল ভালো হতে হবে।

    প্রিয় ভিজিটর, এখানে উপস্থাপিত সকল তথ্য উপাত্ত অভিজ্ঞ লোক দ্বারা ইন্টারনেট থেকে সংগ্রহিত । উল্লেখিত কোন তথ্যের ভুল যদি আপনার নিকট দৃশ্যমান হয় তবে অতিসত্ত্বর তা আমাদের ইমেইলের ([email protected]) মাধ্যমে অবহিত করার জন্য অনুরোধ করছি।

    Leave a Reply

    Your email address will not be published. Required fields are marked *

    This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

    Back to top button
    error: কন্টেন্ট সংরক্ষিত !!