বিদেশে উচ্চশিক্ষা

আইইএলটিএস (IELTS) কি ,কেন এবং কাদের জন্য?

স্বপ্ন যখন বাইরের দেশে উচ্চশিক্ষা, চাকরির ও ইমিগ্রেশনের তখন নিজের যোগ্যতা প্রমাণের ক্ষেত্রে প্রথমেই নাম আসে আইইএলটিএস (IELTS) এর। বর্তমানে প্রতিবছর লাখো শিক্ষার্থী ও পেশাজীবী উচ্চশিক্ষা, চাকরির ও ইমিগ্রেশনের লক্ষ্যে অংশ নেন আইইএলটিএস পরীক্ষায়। গ্রহণযোগ্যতার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিকভাবে আইইএলটিএস এর মান অনেক বেশি স্বীকৃত। বিশ্বব্যাপী এই পরীক্ষা পরিচালনা ও শিক্ষার্থীদের কাছে তথ্য পৌছে দেওয়ার মূল ভূমিকায় রয়েছে বিট্রিশ কাউন্সিল ও আইডিপি। আজ আমরা জানবো আইইএলটিএস সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য। আইইএলটিএস অফিসিয়াল ওয়েবসাইট- www.ielts.org.


আইইএলটিএস (IELTS) কি এবং কাদের জন্য?

The International English Language Testing System এর সংক্ষিপ্ত রুপ IELTS। বাইরের দেশে উচ্চশিক্ষা (স্নাতক, স্নাতকোত্তর অথবা পিএইচডি) এবং ইমিগ্রেশন/ চাকুরি/ব্যবসা ইত্যাদির উদ্দেশ্যে যেতে চাইলে IELTS এর প্রয়োজন পরে। সেক্ষেত্রে উচ্চশিক্ষার জন্য লাগে একাডেমিক IELTS। আর অন্য কোনো উদ্দেশ্যে জেনারেল IELTS দিতে হয়। এর জন্য কোনো শিক্ষাগত যোগ্যতার প্রয়োজন পরে না। যে কেউ এই পরীক্ষায় অংশ নিতে পারে। এ দুটির মধ্যে পার্থক্য খুব বেশি নয়। শুরুর দিকে যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়ায় উচ্চশিক্ষার জন্য এটি অপরিহার্য হলেও বর্তমানে পৃথিবির বিভিন্ন দেশে, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে IELTS লাগে। এই পরীক্ষার জন্য একজন প্রার্থীকে অবশ্যই ১৬ বছর বা তার বেশি হতে হবে।


পরীক্ষা পদ্ধতি ও প্রশ্ন কাঠামো 

IELTS পরীক্ষা ২দিনে হয়। রেজিস্ট্রেশন করা হয় যে তারিখের জন্য সেই দিনে যথাক্রমে লিসেনিং, রিডিং এবং রাইটিং টেস্ট বিরতিহীন ভাবে নেয়। এই তারিখের আগে বা পরে কোনো এক দিন স্পিকিং টেস্ট নেয়। প্রতিটা টেস্টের এর জন্য স্কোর থাকবে ১-৯ স্কেলে এবং দক্ষতা অনুযায়ী প্রতিটা টেস্টে আলাদা আলাদা স্কোর প্রদান করে। পরে সেগুলির গড় করে মোট ব্যান্ড স্কোর (১-৯) প্রকাশ করা হয়।

IELTS পরীক্ষায় ২টি মডিউলে (একাডেমিক কিংবা জেনারেল) মূলত ৪টি অংশ থাকে-

লিসেনিং

এটি মূলত কথোপকথন শুনে বোঝার ক্ষমতা যাচাইকরন টেস্ট। এখানে সামনে প্রশ্নপত্র রেখে একটি পেসেজ ইংরেজীতে বাজিয়ে (অডিও) শোনানো হয়। অডিওটি শুনে ভালো ভাবে বুঝে, তার ভিত্তিতে উওর করতে হয়। কিন্তু অডিওটির কোনো অংশ শুনে বুঝতে না পারলে, দ্বিতীয় বার শোনার কোনো রাস্তা নেই। কাজেই সেটি নিয়ে চিন্তা না করা বা মাথা না ঘামানোই শ্রেয়। ৩০ মিনিটের অডিওটির ৪টি বিভাগে ১০টি করে মোট ৪০টি প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়। প্রতিটির মান ১ ধরে কতটা সঠিক হলো তার উপর ভিত্তি করে ব্যান্ড স্কোর দেওয়া হয়।

রিডিং

এই টেস্টে ৩টি পেসেজ থাকবে এবং পেসেজ পড়ে উওর করতে হবে। এখানে মূলত পেসেজ পড়ে বোঝার ক্ষমতা যাচাই করা হয়। ৩টি বিভাগে মোট ৪০টি প্রশ্ন থাকবে এবং প্রতিটির মান ১ ধরা হবে। সময় থাকবে ১ ঘন্টা। পেসেজ থেকে বাক্য পূরণ, সংক্ষিপ্ত উত্তর, সঠিক উত্তর খুঁজে বের করা ইত্যাদি থাকবে।

এই অংশে একাডেমিক IELTS এবং জেনারেল IELTS এর মধ্যে কিছুটা পার্থক্য রয়েছে। একাডেমিকের থেকে জেনারেল তুলনামূলক সহজ হয়। যেমনঃ একাডেমিকের পেসেজ বা আর্টিকেলটি জার্নাল, ম্যাগাজিন, বই থেকে আসে। অন্যদিকে জেনারেলে ম্যাগাজিন, পত্রিকা, বিজ্ঞাপন, বই অথবা হ্যান্ডআউট থেকে লেখা তুলে দিবে। একাডেমিকের মতো গবেষণা অথবা বিজ্ঞান বিষয়ক না, বরং দৈনন্দিন জীবনে মুখোমুখি হয় এমন বিষয়ই থাকবে জেনারেলে।

রাইটিং

এই টেস্টে সাধারণত কতটুকু কল্পনা শক্তি খাটাতে পারবে বা কোনো বিষয়ের উপর লিখতে পারবে তার পরীক্ষা করা হয়। এক ঘণ্টার মধ্যে দুটি প্রশ্নের উত্তর বা দুইটি পেসেজ লিখতে হবে। প্রথম প্রশ্নে একটি গ্রাফ, ডায়াগ্রাম, চার্ট, অথবা ম্যাপ দেওয়া থাকে যেটিকে নিজের কথায় বিশ্লেষণ করতে হবে। দ্বিতীয় প্রশ্নে একটি আর্গুমেন্ট অথবা স্টেটমেন্ট থাকবে সেটার উপর মতামত এবং সেটার পক্ষে-বিপক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করতে হবে।

একাডেমিক IELTS এবং জেনারেল IELTS-এর রাইটিং এ প্রথম প্রশ্নে একটু পার্থক্য রয়েছে। জেনারেল IELTS এর ক্ষেত্রে ডায়াগ্রাম, চার্ট ইত্যাদির জায়গায় একটি চিঠি লিখতে হয়; সেটি ফরমাল, ইনফরমাল অথবা পার্সোনাল হতে পারে। কিন্তু ২য় প্রশ্ন একই রকম হবে।

স্পিকিং

এই টেস্টের জন্য নির্দিষ্ট একটি দিনে পরীক্ষাস্থলে যেতে হয়। দুই-তিন জন পরীক্ষক থাকেন যারা ইংরেজীতে প্রশ্ন করেন। তিনটি অংশে ১১ থেকে ১৪ মিনিটের এই টেস্টে- প্রথম অংশে কিছু সাধারণ প্রশ্নের (যেমন – পরিবার, পড়াশোনা, কাজ, বন্ধু ইত্যাদি) উত্তর দিতে হয়। দ্বিতীয় অংশে একটি নির্দিষ্ট বিষয়ে এবং দুই মিনিট কথা বলতে হয়। তৃতীয় অংশে পরীক্ষকের সঙ্গে কোনো নির্দিষ্ট বিষয়ে কথোপকথন বা প্রশ্ন-উওর চালাতে হয়, যেগুলো একটু বিশ্লেষণধর্মী হয়।

পরীক্ষার রুমে পাসপোর্ট, পেন বা পেন্সিল এবং লেভেল ফি পানির বোতল নেওয়া যাবে কিন্তু কোন প্রকার ইলেক্ট্রনিকস যন্ত্র বা কোন প্রকার ব্যাগ নেওয়া যাবে না।

আইইএলটিএস (IELT) আবেদন পদ্ধতি

IELTS এর জন্য আইডিপি (IDP) অথবা ব্রিটিশ কাউন্সিল (British Council) যেকোনো একটির অধীনে এই পরীক্ষা দিতে পারে। ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম, সিলেট, খুলনা, বরিশাল ও কুমিল্লা জেলায় ব্রিটিশ কাউন্সিল ও আইডিপি সেন্টার আছে।
অনলাইন এবং টেস্ট সেন্টারে গিয়ে দু’ভাবেই পরীক্ষার জন্য রেজিস্ট্রেশন করা যায়। এর জন্য প্রয়োজন পরবে-
• IELTS পরীক্ষায় রেজিস্ট্রেশনের জন্য একটি বৈধ পাসপোর্ট।
• পাসপোর্ট সাইজের সদ্য তোলা ছবি।
• পূরণকৃত ফর্ম
• রেজিস্ট্রেশন ফিঃ IELTS একাডেমিক ও জেনারেল ট্রেনিং- ১৮,৭৫০ টাকা
এবং IELTS ফর UKVI (একাডেমিক এবং জেনারেল ট্রেনিং)- ২১,১০০ টাকা


আইডিপি এর ওয়েবসাইট- www.idp.com/bangladesh
ব্রিটিশ কাউন্সিলের ওয়েবসাইট- www.britishcouncil.org.bd/bn


আইইএলটিএস (IELTS) এর ফলাফল কতদিন পর দেয়?

IELTS পরীক্ষার ১৩ দিন পরে পরীক্ষার কেন্দ্রে ফলাফল প্রকাশ করে।পাসপোর্ট দেখিয়ে কেন্দ্র থেকে টেস্ট রিপোর্ট ফর্ম সংগ্রহ করতে হয়। এছাড়া এখন ইন্টারনেট থেকেও IELTS পরীক্ষার ফলাফল সংগ্রহ করা যায়।

 ফলাফল কতদিন কার্যকর থাকে?

সাধারণত IELTS পরীক্ষার স্কোর পরীক্ষার দিন থেকে ২ বছরের জন্য বৈধ বলে বিবেচনা করা হয়। যদি IELTS টেস্ট রিপোর্ট ফরমটি ২ বছরের চেয়ে পুরনো হয়, তাহলে আরেকটি টেস্ট রিপোর্ট ফর্ম পেতে পুনরায় পরীক্ষা দিতে হবে।
এখানে আরেকটি বিষয় হচ্ছে, প্রার্থীকে একটি মাত্র টেস্ট রিপোর্ট ফর্ম দিবে। যদি কেউ একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করে, সেক্ষেত্রে একাধিক টেস্ট রিপোর্ট ফর্ম প্রয়োজন হয়। এর জন্য ব্রিটিশ কাউন্সিলের অফিসে আবেদন করতে হবে। অতিরিক্ত প্রতিটি টেস্ট রিপোর্ট ফর্মের জন্য প্রায় ৩-৪ হাজার টাকা দিতে হবে। কিন্তু প্রার্থীর হাতে একটির অধিক টেস্ট রিপোর্ট ফর্ম দিবে না। এক্ষেত্রে ব্রিটিশ কাউন্সিল ঐ বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে টেস্ট রিপোর্ট ফর্ম পাঠিয়ে দিবে।

আইইএলটিএস (IELTS) পরীক্ষা প্রস্তুতি

এই প্রস্তুতি যে সম্পূর্ণ কোচিং নির্ভর তা নয়। কোচিং-এ শিখিয়ে দেওয়া হয় কিছু টেকনিক বাকীটা পুরোই নিজের উপর নির্ভর করে। কোচিং ছাড়াও বাসায় বসে ইন্টারনেটের সাহায্য নিয়েও IELTS প্রস্তুতি নেওয়া সম্ভব। শুধু দরকার ইচ্ছা বা কমিটমেন্ট। তারপর প্রস্তুতি শেষে নিজের লেভেল বোঝার জন্য যে কোনো জায়গায় মক টেস্ট দেওয়া যেতে পারে। এটির ফলে যা হবে, পুরো প্রক্রিয়াটির সাথে পরিচিত হওয়া যাবে।
IELTS পরীক্ষার জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ বই- The Official Cambridge Guide to IELTS, Cambridge English Vocabulary for IELTS, Practical English Usage by Michael Swan, TOEFL by Cliffs ইত্যাদি।
এছাড়া IELTS এর সব গুলো টেস্ট অনুশীলনের জন্য নানান রকম সাইট রয়েছে অনলাইনে। ইউটিউবেও নানান রকম কোর্স ও টিপস রয়েছে যা IELTS প্রস্তুতির জন্য সহায়ক।

প্রিয় ভিজিটর, এখানে উপস্থাপিত সকল তথ্য উপাত্ত অভিজ্ঞ লোক দ্বারা ইন্টারনেট থেকে সংগ্রহিত । উল্লেখিত কোন তথ্যের ভুল যদি আপনার নিকট দৃশ্যমান হয় তবে অতিসত্ত্বর তা আমাদের ইমেইলের ([email protected]) মাধ্যমে অবহিত করার জন্য অনুরোধ করছি।

��তামত

  1. আচ্ছা, IELTS দিলে কি শুধু যুক্তরাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেই আবেদন করা যায়? যুক্তরাষ্ট্রেরগুলোতে যায় না? যেমন: হার্ভার্ড, এমআইটি, এসবের ক্ষেত্রেও কি IELTS দিলে হবে?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back to top button
error: কন্টেন্ট সংরক্ষিত !!