এইচএসসি এসাইনমেন্ট ২০২১

এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন এসাইনমেন্ট নমুনা সমাধান ২০২১

২০২১ সালের এইচ এস সি পৌরনীতি ও সুশাসন এসাইনমেন্ট প্রশ্ন ও উত্তর । এইচএসসি পৌরনীতি এসাইনমেন্ট সমাধান আমাদরে ওয়েবসাইটে যুক্ত করা হয়েছে । পরীক্ষার্থীদের জন্য পূনর্বিন্যাসকৃত পাঠ্যসূচির আলােকে প্রণয়নকৃত অ্যাসাইনমেন্ট প্রথম ধাপে ০২(দুই) সপ্তাহের (১ম ও ২য় সপ্তাহ) জন্য ২৩টি বিষয়ের এসাইনমেন্ট দেওয়া হয়েছে ।

সুহৃদ,
অতিমারির কারণে মাউশি (মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষার অধিদপ্তর) কর্তৃক পরিচালিত সাময়িক বিকল্প শিক্ষা কার্যক্রম “ এসাইনমেন্ট ”। এসাইনমেন্ট শব্দটি স্নাতক/স্নাতোকত্তর সহ শিক্ষার উচ্চ পর্যায়ের ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে পরিচিত একটি পদ্ধতি হলেও মাধ্যমিক ও নিম্নস্তরের শিক্ষার্থীদের কাছে এটি একেবারেই নতুন। দীর্ঘ ৫ বছর ধরে বাংলাদেশের প্রায় সকল স্তরের শিক্ষার বিভিন্ন প্রকার সঠিক তথ্য ডিজিটাল উপায়ে সরবরাহের ধারাবাহিকতায় এডমিশনওয়্যার(admissionwar) এসাইনমেন্টের ক্ষেত্রেও বিভিন্ন প্রকার তথ্য যেমনঃ এসাইনমেন্ট সম্পর্কিত আপডেট ও এসাইনমেন্টের এর নমুনা উত্তর সরবরাহ করে আসছে।
কিন্তু, সম্প্রতি আমরা আমাদের ফেসবুক পেইজ সহ বিভিন্ন মাধ্যম হতে জানতে পেরেছি শিক্ষার্থীরা এই নমুনা উত্তর দেখে দেখে হুবহু লিখছে।
এসাইনমেন্ট এর নমুনা উত্তরের কৈফিয়তঃ
যেহেতু মাউশির-র এই এসাইনমেন্ট কার্যক্রমটি মাধ্যমিক ও নিম্নস্তরের শিক্ষার্থীদের জন্য সম্পুর্ণ নতুন তাই তারা যাতে এই নমুনা উত্তর দেখে দিক নির্দেশনা নিতে পারে , এসাইনমেন্ট কার্যক্রমের উদ্দেশ্য সম্পর্কে ভালোভাবে বুঝতে পারে এবং এই করোনা কালীন দুঃসময়ে তারা যেন(বিশেষ করে প্রত্যন্ত অঞ্চলের শিক্ষার্থীরা) চলমান শিক্ষা কার্যক্রম সম্বন্ধে সম্যক অবগত থাকে তারই ক্ষুদ্র প্রয়াস আমাদের।
দায় অস্বীকারঃ
কলম থেকে শুরু করে তলোয়ার। পৃথীবির সবকিছুর ভালো-মন্দ নির্ভর করে আপনি সেটা কিভাবে নিচ্ছেন।ডিনামাইট(বোমা) যেমন পাহাড় গুড়িয়ে সমতল করে চাষাবাদের যোগ্য করে মানুষকে অনাহারে মৃত্যুর পথ থেকে বাচিয়ে এনেছিলো, আজ সেই বোমাই লক্ষ লক্ষ লোকের মৃত্যুর কারন। তাই যেকোন বিষয়ের সঠিক ব্যবহারটাই আমাদের কাম্য।
এডমিশনওয়্যার(admissionwar) ওয়েবসাইটে প্রদত্ত এসাইনমেন্ট কার্যক্রম মহৎ উদ্দেশ্যে পরিচালিত. সুতরাং এটি কিভাবে আপনি বা আপনারা ব্যবহার করছেন সেটা একান্তই আপনাদের ব্যক্তিগত ব্যাপার। এবং তার জন্য শুধুমাত্র এবং কেবল মাত্র আপনারাই দায়ী। এডমিশনওয়ার এই সংক্রান্ত কোন দায় বহন করবেনা।

এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন এসাইনমেন্ট সমাধান ২০২১

প্রথম পর্যায়ে এসাইনমেন্ট  আগামী ০৯ আগষ্ট ২০২১ তারিখে মধ্যে সুবিধাজনক সময়ে সরকার ঘােষিত স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণপূর্বক শিক্ষার্থীরা তাদের অ্যাসাইনমেন্ট সম্পন্ন করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জমা (সরাসরি/অনলাইনে) প্রদান করবে। প্রথম ধাপের এসাইনমেন্ট জমা নেওয়ার পর দ্বিতীয় ধাপের অ্যাসাইনমেন্ট যথা নিয়মে প্রকাশ করা হবে। বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে, নির্দিষ্ট কভার পেইজ ব্যতীত অন্য কোন কভার পেইজ ব্যবহার করা যাবে না । কাভার পৃষ্ঠার উপরের অংশ ইংরেজিতে নির্ভুলভাবে পূরণ করতে হবে এবং নির্ধারিত অংশ ব্যতীত কাভার পৃষ্ঠার অন্য কোনাে স্থানে বা অপর পৃষ্ঠায় কোনাে কিছু লেখা যাবে না ।

এইচ এস সি পৌরনীতি এসাইনমেন্ট প্রশ্ন ও উত্তর

এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম এসাইনমেন্ট  প্রথম পত্র বইয়ের প্রথম অধ্যায়ঃ পৌরনীতি ও সুশাসন পরিচিতি থেকে নেওয়া হয়েছে ।

প্রশ্ন:  ”নাগরিকতার সাথে জড়িত সকল প্রশ্ন সম্পর্কে যে শাস্ত্র আলােচনা পৌরনীতি।” ই, এম, হােয়াইটের এই সংজ্ঞার আলােকে পৌরনীতি ও সুশাসনের বিষয়বস্তু ও ক্রমবিকাশ সম্পর্কে একটি নিবন্ধ রচনা কর।  ( প্রশ্নের ছবি)

পৌরনীতির ধারণা

পৌরনীতি হল সামাজিক ও নাগরিকতা বিষয়ক বিজ্ঞান। পৌরনীতির ইংরেজি প্রতিশব্দ Civics (সিভিক)। Civics শব্দটি ল্যাটিন শব্দ Civis এবং Civitas শব্দ থেকে এসেছে। Civis এবং Civitas শব্দের অর্থ যথাক্রমে নাগরিক (Citizen) ও নগররাষ্ট্র (City State)। সুতরাং শব্দগত বা উৎপত্তিগত অর্থে Civics বা পৌরনীতি হল নগর রাষ্ট্রে বসবাসরত নাগরিকদের আচার-আচরণ, রীতিনীতি ও কার্যাবলি সংক্রান্ত বিজ্ঞান। তবে প্রাচীনকালে ভারতবর্ষে এবং গ্রীসে Civics বা পৌরনীতি বলতে নাগরিকদের অধিকার ও কর্তব্যকে বােঝানাে হতাে।

বর্তমানে পৌরনীতিকে কেবল শব্দগত অর্থে আলােচনা করা হয় না। কেননা, বর্তমান আধুনিক রাষ্ট্রগুলাে গ্রিসের নগররাষ্ট্র (City State) এর মতাে নয়, বরং এগুলাে এখন জাতি রাষ্ট্র (Nation State) হিসেবেই পরিগণিত। প্রাচীন গ্রিসের নগররাষ্ট্রগুলাের অপেক্ষা বর্তমান আধুনিক জাতি রাষ্ট্রগুলাে আয়তনে বড় এবং জনসংখ্যাও বেশি। এসব জাতি রাষ্ট্রের নাগরিকদের জীবন এবং কার্যাবলি জটিল ও বহুমুখী। আধুনিক জাতি রাষ্ট্রে নাগরিকদের ভূমিকা ও কার্যাবলি, আচার-আচরণ এবং তাদের বিভিন্ন আর্থ-সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে ধারাবাহিক পর্যালােচনার মাধ্যমে যে শাস্ত্র আদর্শ নাগরিক জীবনের জ্ঞান দান করে তাকেই পৌরনীতি বলে।

পৌরনীতি বিষয়ে ই এম হােয়াইট (E.M. White) বলেন, “পৌরনীতি হল জ্ঞানের সেই শাখা যা এক জন নাগরিকের অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ এবং স্থানীয়, জাতীয় ও মানবসত্তার সাথে জড়িত সকল বিষয় নিয়ে আলােচনা করে।” (Civics is that branch of human knowledge which deals with everything relating to a citizen- past, present and future; local, national and human.”)

ফ্রেডরিখ জেমস গােল্ড (Frederick James Gould) বলেন, “পৌরনীতি হচ্ছে প্রতিষ্ঠান, আচরণ ও চেতনার অধ্যয়ন শাস্ত্র যার মাধ্যমে একজন পুরুষ বা নারী কোন একটি রাজনৈতিক সম্প্রদায়ের সদস্য হিসাবে কর্তব্য পালন করতে পারে। এবং এর সুযােগ-সুবিধাগুলাে গ্রহন করতে পারে।” (eCivics is the study of institutions, habits and spirit by means of which a man or women may fulfill the duties and receive the benifit of membership in a political community.”)

সুতরাং পৌরনীতি হল সে শাস্ত্র যা নাগরিক, নাগরিকের কার্যক্রম, অধিকার ও কর্তব্য, নাগরিকের অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ সম্পর্কিত দিক এবং নাগরিকের সংগঠনসমূহ, রাষ্ট্র ও বিশ্বমানবতা সংক্রান্ত সকল বিষয়ের সমস্যা ও সমাধান সম্পর্কে বিশদ আলােচনা করে।

সুশাসনের ধারণা

সুশাসন প্রত্যয়টি পৌরনীতির সাম্প্রতিক সংযােজন। সুশাসনের ইংরেজি প্রতিশব্দ হল Good Governance’। সুশাসনকে স্পষ্টভাবে বুঝতে হলে শাসন সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা থাকতে হবে। Governance হল একটি বহুমাত্রিক ধারণা যা বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ, ক্ষেত্র এবং প্রেক্ষাপট থেকে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। Government এর মতই Governance শব্দটি এসেছে ‘kubernao’ নামক ল্যাটিন শব্দ থেকে, যার অর্থ পরিচালনা করা। সাধারণত Governance বা শাসন এমন একটি পদ্ধতিকে বােঝায়, যেখানে একটি পরিকল্পিত প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কোনাে সংস্থা, সমাজ বা রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও নীতি নির্ধারণ করা হয়ে থাকে।

বর্তমান বিশ্বে একটি জনপ্রিয় ধারণা হল সুশাসন। সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের পূর্বশর্ত হচ্ছে সুশাসন। ১৯৮৯ সালে বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদন সর্বপ্রথম সুশাসন প্রত্যয়টি ব্যবহার করা হয়। ২০০০ সালে বিশ্বব্যাংক সুশাসনের চারটি স্তম্ভ ঘােষণা করে। এ চারটি স্তম্ভ হল-

  • দায়িত্বশীলতা
  • স্বচ্ছতা
  • আইনী কাঠামাে ও
  • অংশগ্রহণ।

ম্যাক করণী (Mac Corney) এ প্রসঙ্গে বলেন, “সুশাসন বলতে রাষ্ট্রের সাথে সুশীল সমাজের, সরকারের সাথে জনগণের এবং শাসকের সাথে শাসিতের সম্পর্ককে বুঝায়”।

মারটিন মিনােগ (Martin Minogue) সুশাসন সম্পর্কে বলেন, “ব্যাপক অর্থে সুশাসন হচ্ছে কতগুলাে উদ্যোগের সমষ্টি এবং একটি সংস্কার কৌশল যা সরকারকে অধিকতর গণতান্ত্রিক, স্বচ্ছ ও জবাবদিহিতামূলক করতে সুশীল সমাজের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে কার্যকর করে তােলে।”

পরিশেষে বলা যায় যে, সরকারের স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, দায়িত্বশীলতা এবং জনগণের অংশগ্রহণের ভিত্তিতে জনগণের কল্যাণ শাসনকার্য পরিচালনাই হচ্ছে সুশাসন। সুশাসন সেই শাসনব্যবস্থা যেখানে জনগণের তথা রাষ্ট্রের সার্বিক কল্যাণ সাধিত হয়।

পৌরনীতি ও সুশাসনের পরিধি 

পৌরনীতি ও সুশাসনের পরিধি ব্যাপক। পৌরনীতি ও সুশাসনের পরিধি সম্পর্কে নিয়ে আলােচনা করা হল

১। নাগরিকতা বিষয়ক :  পৌরনীতি ও সুশাসন মূলত নাগরিকতা বিষয়ক বিজ্ঞান। নাগরিকের উত্তম ও মর্যাদাপূর্ণ জীবন
প্রতিষ্ঠা করা পৌরনীতি ও সুশাসনের প্রধান লক্ষ্য। পৌরনীতি ও সুশাসন নাগরিকের দায়িত্ব ও কর্তব্য, সচেতনতা, সুনাগরিকতা, নাগরিকতা অর্জন ও বিলােপ, নাগরিকতার অর্থ ও প্রকৃতি, সুনাগরিকের গুণাবলি প্রভৃতি সম্পর্কে আলােচনা করে।

২। মৌলিক প্রতিষ্ঠান সম্পর্কিত : মানব সভ্যতার ইতিহাসে পরিবার হল আদি ও অকৃত্রিম প্রতিষ্ঠান। কালের বিবর্তন ধারায় পরিবারের সম্প্রসারণ হয়েছে এবং গড়ে উঠেছে রাষ্ট্র ও অন্যান্য বহুবিধ সামাজিক এবং রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান। পৌরনীতি ও সুশাসন পরিবার থেকে শুরু করে সমাজ, রাষ্ট্র, রাষ্ট্রের উৎপত্তি ও বিকাশ, রাষ্ট্রের কার্যাবলি প্রভৃতি
মৌলিক প্রতিষ্ঠান পৌরনীতি ও সুশাসনের অন্তর্ভূক্ত।

৩। রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে আলােচনা : পৌরনীতি ও সুশাসনের সাথে রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানসমূহ ওৎপ্রােতভাবে
জড়িত। রাষ্ট্র, রাষ্ট্রের ধারণা, রাষ্ট্রের উৎপত্তি, রাষ্ট্রের কার্যাবলি, রাষ্ট্র সম্পর্কে বিভিন্ন মতবাদ, রাষ্ট্রের উপাদান, সংবিধান, সংবিধানের শ্রেণিবিভাগ, সংবিধানের বৈশিষ্ট্য, সরকার, সরকারের শ্রেণিবিভাগ, সরকারের বিভিন্ন অঙ্গ, জনমত, জনমতের বাহন, নির্বাচকমন্ডলী, রাজনৈতিক দল, নির্বাচন কমিশন প্রভৃতি পৌরনীতি ও সুশাসনের
আলােচনার অন্তর্ভুক্ত।

৪। সামাজিক ও রাজনৈতিক বিমূর্ত বিষয় নিয়ে আলােচনা :  পৌরনীতি ও সুশাসন সামাজিক ও রাজনৈতিক অঙ্গনের
বিভিন্ন বিমূর্ত বিষয় নিয়ে আলােচনা করে। আইন, আইনের উৎস ও প্রকৃতি, আইন ও নৈতিকতা, স্বাধীনতা, স্বাধীনতার প্রকৃতি, স্বাধীনতার রক্ষাকবচ, সাম্য ও স্বাধীনতা, সাম্যের প্রকারভেদ প্রভৃতি সম্পর্কে পৌরনীতি ও সুশাসন
আলােচনা করে।

৫। রাজনৈতিক ঘটনাবলি : পৌরনীতি ও সুশাসন রাজনৈতিক বিভিন্ন ঘটনাবলি নিয়ে আলােচনা করে। যেমন
বাংলাদেশে পৌরনীতি ও সুশাসন পলাশীর যুদ্ধ, সিপাহী বিদ্রোহ, ১৯৪০ সালের লাহাের প্রস্তাব, ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ১৯৬৬ সালের ছয় দফা, ১৯৬৯ সালের গণ-অভ্যুত্থান, ১৯৭০ সালের
নির্বাচন, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ, সামরিক অভূত্থান ইত্যাদি রাজনৈতিক পর্যায় সম্পর্কে আলােচনা করে।

৬। সুশাসন সম্পর্কে আলােচনা : পৌরনীতি ও সুশাসন রাষ্ট্রের সুশাসনের বহুমাত্রিক ধারণা সম্পর্কে আলােচনা করে।
সুশাসনের উপাদান, সুশাসনের সমস্যা, সুশাসনের সমস্যার সমাধান, সুশাসনের সমস্যা সমাধানে সরকার ও
জনগণের ভূমিকা সম্পর্কে পৌরনীতি ও সুশাসন আলােচনা করে।

৭। নাগরিকের অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ নিয়ে আলােচনা:  পৌরনীতি ও সুশাসন নাগরিকের অধিকার ও কর্তব্যের
বর্তমান স্বরূপ সম্পর্কে আলােচনা করে এবং এর মাধ্যমে ভবিষ্যৎ নাগরিক জীবনের আদর্শ ও স্বরূপের ইঙ্গিত প্রদান করে।

৮। নাগরিকের স্থানীয়, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক দিক নিয়ে আলােচনা :  পৌরনীতি ও সুশাসন নাগরিকের সামাজিক ও
রাজনৈতিক কার্যাবলির সাথে সম্পৃক্ত স্থানীয় সংস্থার (যেমন, ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, পৌরসভা, জেলা পরিষদ, সিটি কর্পোরেশন ইত্যাদি) গঠন, ক্ষমতা ও কার্যাবলি নিয়ে আলােচনা করে। নাগরিকের জাতীয় বিষয় (যেমন, স্বাধীনতা আন্দোলনের পটভূমি, মুক্তিযুদ্ধ, বিভিন্ন জাতীয় নেতার অবদান, দেশ রক্ষায় নাগরিকের ভূমিকা, জাতীয় রাজনৈতিক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাসমূহ) সম্পর্কে আলােচনা করে। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা ও সংগঠন এবং বিভিন্ন
ঘটনাবলি সম্পর্কেও পৌরনীতি ও সুশাসন আলােচনা করে।

৯। নাগরিক জীবনের সাথে সম্পৃক্ত বিষয়াদি : পৌরনীতি ও সুশাসন আধুনিক নাগরিক জীবনের সাথে সম্পৃক্ত বিভিন্ন
বিষয়াবলি নিয়ে আলােচনা করে। বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক সমস্যার সমাধানও পাওয়া যায় এর মাধ্যমে। যেমন- ইভটিজিং, দুর্নীতি, ইলেকট্রনিক গভর্নেন্স (ই-গভর্নেন্স), দারিদ্র বিমােচনের মত বিষয়গুলির আলােচনা | পৌরনীতি ও সুশাসনের পরিধিকে সমৃদ্ধ করেছে।

১০। সুশাসন ও ই-গভর্নেন্স :  পৌরনীতি ও সুশাসন বর্তমান সময়ে সুশাসন ও ই-গভর্নেন্স নিয়ে আলােচনা করে। সরকার | কিভাবে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা, আইনের শাসন, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, নিরপেক্ষ নির্বাচন, দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ, দক্ষ
| মানব সম্পদ গড়ে তুলতে পারে সে বিষয়ে পৌরনীতি ও সুশাসন আলােচনা করে। পরিশেষে বলা যায় যে, পৌরনীতি ও সুশাসনের পরিধি ও বিষয়বস্তু ব্যাপক ও বিস্তৃত। নাগরিকের জীবন ও কার্যাবলি যতদূর পর্যন্ত বিস্তৃত পৌরনীতি ও সুশাসনের পরিধিও ততদূর পর্যন্ত বিস্তৃত।

সুশাসনের বৈশিষ্ট্য

সুশাসনের মৌলিক ও প্রাথমিক চরিত্র হচ্ছে- সুশাসনের আওতায় সকল কাজ হবে অপব্যবহার ও দুর্নীতিমুক্ত এবং ন্যায়পরায়ণভিত্তিক ও আইনের শাসনের প্রতি শর্তহীনভাবে অনুগত। সুশাসনের এই চরিত্র বা বৈশিষ্ট্য বিস্তারিতভাবে আলােচনা করলে তা কয়েকটি বিষয়ের ওপর গুরুত্বারােপ করে। নিম্নে এ সম্পর্কে আলােচনা করা হল: (

ক) অংশগ্রহণ: নারী-পুরুষ নির্বিশেষে শাসনের কাজে সকলের প্রত্যক্ষ বা পরােক্ষ অংশগ্রহণ হচ্ছে সুশাসনের অন্যতম
ভিত্তি। রাষ্ট্রের আয়তন ও জনসংখ্যা অধিক হওয়ার কারণে বর্তমানকালে প্রত্যক্ষভাবে সকলে শাসন কার্যে অংশগ্রহণ করতে পারে না। সে কারণে পরােক্ষ অংশগ্রহণের মাধ্যম হচ্ছে বৈধ প্রতিষ্ঠানসমূহ। অংশগ্রহনের অর্থ হচ্ছে, বৈধ ও কার্যকরী যে কোন সংগঠন গড়ে তােলার স্বাধীনতা এবং এসব সংগঠনের মাধ্যমে মতামত প্রকাশের অবারিত সুযােগ। শুধু তাই নয়, রাষ্ট্রের সুশীল সমাজকেও নিরপেক্ষ, কল্যাণকর ও সামগ্রিক উন্নয়নের লক্ষ্যে সুসংগঠিত থাকতে হবে।

খ) আইনের শাসন: সুশাসনের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে আইনের শাসন। সুশাসনের জন্য এমন আইনগত কাঠামাের উপস্থিতি প্রয়ােজন যা আইন প্রয়ােগের ক্ষেত্রে নিরপেক্ষ ভূমিকা পালনে সক্ষম। নিরপেক্ষভাবে আইন। প্রয়ােগের বিশেষভাবে প্রয়ােজন মানবাধিকার সংরক্ষণ, বিশেষ করে চরম দরিদ্র ও দরিদ্র জনগােষ্ঠী এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জন্য। আবার এসব কিছুর জন্য প্রয়ােজন স্বাধীন বিচার বিভাগ এবং নিরপেক্ষ ও দুর্নীতিমুক্ত আইন
প্রয়ােগকারী সংস্থা।

(গ) স্বচ্ছতা : সাধারণভাবে স্বচ্ছতা বলতে সিদ্ধান্ত গ্রহণে ও তা বাস্তবায়নে আইনসম্মত পদ্ধতি অবলম্বন করাকে বােঝায়।
কেবল তাই নয়, স্বচ্ছতা দ্বারা এটিও বুঝানাে হয় যে, আইনসম্মতভাবে গৃহীত সিদ্ধান্ত ও তা বাস্তবায়নের মাধ্যমে যারা প্রভাবিত হবে তাদের জন্য সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে তথ্য প্রবাহ অবাধ করা এবং তথ্য জানার অধিকার উন্মুক্ত করা। একথার
অর্থ হচ্ছে তথ্য প্রবাহ যেন সকল স্তরের জনগণের কাছে সহজবােধ্য হয় এবং বিভিন্ন মাধ্যমে সকলের কাছে পৌছায়।

(ঘ) সংবেদনশীলতা: সংবেদনশীলতা হচ্ছে শাসনযন্ত্রের এমন দক্ষতা, যােগ্যতা ও সামর্থ্য যার মাধ্যমে জনসাধারণের
বিশেষ করে প্রান্তিক জনগােষ্ঠীর মর্যাদাপূর্ণ জীবন যাপনের জন্য সকল বৈধ প্রয়ােজন ও দাবী-দাওয়া যথাসময়ে পূরণ করা সম্ভব হয়। অর্থাৎ, সরকার জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণে যথাসময়ে সাড়াদানে প্রস্তুত থাকাটাই
সংবেদনশীলতা।

(ঙ) ঐকমত্য: যেকোন রাষ্ট্রেই নানা মত ও স্বার্থের উপস্থিতি বিদ্যমান। এই সব মত ও স্বার্থের মাঝে সমন্বয় সাধন করে
সামাজিক ঐক্য ধরে রাখা সুশাসনের গুরুত্বপূর্ণ একটি বৈশিষ্ট্য। সুশাসনের ক্ষেত্রে এরূপ সমন্বয় সাধন কাজ এমনভাবে সম্পন্ন করা হয় যাতে সামগ্রিকভাবে সমাজের সকল অংশ লাভবান হয়। এভাবে মত ও স্বার্থের সমন্বয় সাধনের মাধ্যমে সামাজিক ঐক্য বজায় রাখার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট জনগােষ্ঠীর ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক একরূপতা সহায়ক ভূমিকা পালন করে।

(ঞ) জবাবদিহিতা: সুশাসনের জন্য জবাবদিহিতা গুরুত্বপূর্ণ একটা বৈশিষ্ট্য। এক্ষেত্রে কেবলমাত্র সরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহই
নয় বরং ব্যক্তিখাত ও সুশীল সমাজের সংগঠনসমূহও তাদের অংশীদারদের নিকট এবং সার্বিকভাবে জনসাধারণের নিকট তাদের কাজকর্মের জন্য দায়বদ্ধ থাকবে এবং জবাবদিহি করবে। এরূপ দায়বদ্ধতা এবং জবাবদিহিতা স্বচ্ছতা
ও আইনের শাসন ছাড়া সম্ভব নয়।

এসব ছাড়াও সুশাসনের জন্য ন্যায়পরায়নতা, কার্যকারিতা ও দক্ষতার শর্তপূরণ একান্ত আবশ্যক। উপরে আলােচিত বৈশিষ্ট্যসমূহের আলােকে বুঝা যায় যে, সম্পূর্ণরূপে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা সহজ কাজ নয়। খুব কম রাষ্ট্রই সুশাসনের সম্পূর্ণতা অর্জন করতে পেরেছে। তবুও একথা অস্বীকার করা যাবে না যে, টেকসই উন্নয়নের জন্য সুশাসনের গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্যগুলাে অর্জন করার কোন বিকল্প নেই।

পৌরনীতি ও সুশাসনের ক্রমবিকাশ

মানুষ সামাজিক জীব। সেহ ও ভালােবাসার প্রত্যাশী মানুষ সঙ্গপ্রিয়তার জন্যই সমাজবদ্ধ হয়ে বসবাস করতে চায়। সুদূর অতীতে সমাজবদ্ধ মানুষের জীবনকে কেন্দ্র করে কতগুলাে নিয়ম-কানুন, রীতি-নীতি প্রচলিত ছিল।

প্রাচীন গ্রিসের নগররাষ্ট্রে বসবাসকারী নাগরিক জীবনকে নিয়ন্ত্রণ করতে কতগুলাে বিধি বিধান বা নিয়ম-কানুন । অবশ্য প্রাচীন গ্রিসে যারা রাষ্ট্র পরিচালনায় অংশগ্রহণ করত শুধু তাদেরকেই বলা হতাে নাগরিক। আর নাগরিকদের অধিকার ও কর্তব্য নিয়ে জ্ঞানের যে শাখায় আলােচনা করা হতাে তাকে বলা হতাে পৌরনীতি।

সমসাময়িক ভারতবর্ষে নগর কে বলা হতাে পুর বা পুরী এবং এর অধিবাসীদের বলা হতাে পুরবাসী। তাদের জীবনকে বলা হতাে পৌরজীবন এবং নাগরিক জীবন সম্পর্কিত বিদ্যার নাম ছিল পৌরনীতি। প্রাচীন ভারতে কৌটিল্য সুশাসন এর উপর গুরুত্ব ও আরােপ করেছিলেন। তিনি সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য আইনের শাসন , দায়িত্বশীল প্রশাসন, সিন্ধান্তের ভিত্তি হিসেবে ন্যায় বিচার ও যৌক্তিকতা এবং দুর্নীতিমুক্ত শাসন প্রতিষ্ঠার ওপর গুরুত্ব আরােপ করেছিলেন । এ থেকে বােঝা যায় যে, প্রাচীন ভারতবর্ষেও সুশাসন এর প্রয়ােজনীয়তা অনেকে উপলব্ধি করেছিলেন এবং তা প্রতিষ্ঠার জন্য সচেষ্ট হয়েছিলেন।

আধুনিক রাষ্ট্রের লক্ষ্য হলাে জনকল্যাণ। এ জন্য আধুনিক অধিকাংশ রাষ্ট্রকেই জনকল্যাণকর রাষ্ট্র বলা হয়। বর্তমান রাষ্ট্রের লক্ষ্য হলাে সুশাসন প্রতিষ্ঠা। সুশাসন একদিনে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে না। সুশাসনের ধারণাও একদিনে গড়ে ওঠেনি। ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণ নীতি,বিচার বিভাগের স্বাধীনতার প্রসঙ্গ ও দাবি , প্রশাসনে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার প্রসঙ্গ, জন
অংশগ্রহণের দাবি, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার দাবি, মৌলিক অধিকার ও মানবধিকার দাবি আজ ধ্বনিত-প্রতিধ্বনিত হচ্ছে। এর ফলে সুশাসন বিষয়টি আজ পৌরনীতিতে গুরুত্বের সাথে আলােচিত হচ্ছে। আমাদের দেশে পৌরনীতি নামকরণ করা হয়েছে পৌরনীতি ও সুশাসন।


২০২১ সালের এসএসসির অন্যান্য বিষয়ের উত্তর দেখুন এখান থেকে  অথবা চোখ রাখুন আমাদের অফিশিয়াল ফেসবুক পেইজে ।

প্রিয় ভিজিটর, এখানে উপস্থাপিত সকল তথ্য উপাত্ত অভিজ্ঞ লোক দ্বারা ইন্টারনেট থেকে সংগ্রহিত । উল্লেখিত কোন তথ্যের ভুল যদি আপনার নিকট দৃশ্যমান হয় তবে অতিসত্ত্বর তা আমাদের ইমেইলের ([email protected]) মাধ্যমে অবহিত করার জন্য অনুরোধ করছি।

��তামত

  1. ঙ. উপস্থাপনা কৌশল নান্দনিক ও সৃজনশীল উপস্থাপন অধিকাংশ (সম্পূর্ণ নয়) নান্দনিক ও সৃজনশীল উপস্থাপন আংশিক নান্দনিক ও সৃজনশীল উপস্থাপন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back to top button
error: কন্টেন্ট সংরক্ষিত !!