এসএসসি এসাইনমেন্ট ২০২১

এসএসসি পৌরনীতি ও নাগরিকতা এসাইনমেন্ট নমুনা সমাধান ২০২১ (নতুন)

২০২১ সালের এস এস সি পৌরনীতি ও নাগরিকতা নতুন এসাইনমেন্ট প্রশ্ন ও উত্তর । এসএসসি পৌরনীতি এসাইনমেন্ট সমাধান আমাদের ওয়েবসাইটে যুক্ত করা হয়েছে । আপনি যদি ২০২১ সালের এসএসসি মানবিক বিভাগের পরীক্ষার্থী হোন তাহলে এই পোষ্টটি আপনার জন্য ।

এসএসসি পৌরনীতি ও নাগরিকতা এসাইনমেন্ট নমুনা সমাধান ২০২১

মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক অধিদপ্তরের ওয়েবসাইট dshe.gov.bd-এ গত ১৮ জুলাই তারিখে এসএসসি পরীক্ষার্থীদের জন্য নির্ধারিত এসাইনমেন্ট প্রকাশ করা হয় । নোটিশ অনুযায়ী, প্রতি বিভাগের শিক্ষার্থীদের গ্রুপভিত্তিক বিষয়ের উপর প্রতি সপ্তাহে ০২ টি করে ১২ সপ্তাহের জন্য মােট ২৪ টি অ্যাসাইনমেন্ট প্রণয়ন করা হবে । অর্থ্যাৎ মােট ৩২টি অ্যাসাইনমেন্ট থেকে একজন শিক্ষার্থীকে চতুর্থ বিষয় বাদ দিয়ে প্রতিটি গ্রুপভিত্তিক বিষয়ের ৮টি করে মােট ২৪টি অ্যাসাইনমেন্ট সম্পন্ন করতে হবে। ঐচ্ছিক বিষয়ের জন্য কোনাে অ্যাসাইনমেন্ট তৈরি করতে হবে না। আজকে আমরা মানবিক বিভগের জন্য নির্ধারিত পৌরনীতি এসাইনমেন্ট প্রশ্ন ও নমুনা উত্তর দেখব ।

এস এস সি পৌরনীতি এসাইনমেন্ট প্রশ্ন ও উত্তর

পৌরনীতি ও নাগরিকতার এসাইনমেন্ট সংশোধন করে প্রকাশ করা হয়েছে । শিক্ষার্থীরা সংশোধিত এসাইনমেন্ট সম্পন্ন করে নিজ নিজ বিদ্যালয়ে জমা দিবে ।

মানবিক শাখার শিক্ষার্থীরা তাদের বিভাগভিত্তিক বিষয় হিসেবে পৌরনীতি ও নাগরিকতা বিষয়ের উপর এসাইনমেন্ট জমা দিবে ।

এসাইনমেন্ট নং ২

এসএসসি পৌরনীতি ও নাগরিকতা ২য় এসাইনমেন্ট মূল বইয়ের প্রথম অধ্যায়: পৌরনীতি ও নাগরিকতা থেকে নেওয়া হয়েছে ।

প্রশ্ন : রাষ্ট্র ও রাষ্ট্রের উপাদান, ক্লাষ্ট্রের উৎপত্তি সংক্রান্ত মতবাদ এবং রাষ্ট্র ও সরকাত্রের সম্পর্ক বিশ্লেষণ ।

SSC-Assignment-4th-week-2021-admissionwar-com-16

উত্তর

রাষ্ট্র ও রাষ্ট্রের উপাদান

প্রতিটি নাগরিকের কাছে রাষ্ট্র একটি পরিচিত রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান। রাষ্ট্র শুধুমাত্র রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান নয়, ভৌগােলিক প্রতিষ্ঠানও বটে । মানুষ কোন না কোন রাষ্ট্রের নাগরিক। রাষ্ট্র বিভিন্ন সময় বিভিন্ন অর্থে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। রাষ্ট্র হচ্ছে নাগরিক জীবনের সর্বোচ্চ ও শক্তিশালী রাজনৈতিক একক। মানুষকে বলা হয় সমাজিক ও রাজনৈতিক জীব। রাষ্ট্রের মুখপাত্র হিসেবে সরকার রাষ্ট্র পরিচালনা করে। অতীতে রাষ্ট্র এবং সরকারের মাধ্যে। পার্থক্য নির্দেশ করা হত না। ধীরে ধীরে শব্দটি পৃথক অর্থ ধারণ করেছে এবং পূর্ণাঙ্গ রূপ পেয়েছে।

রাষ্ট্রের সংজ্ঞা

বিভিন্ন লেখক ও রাষ্ট্রচিন্তাবিদগণ বিভিন্নভাবে রাষ্ট্রের সংজ্ঞা নির্দেশ করেছেন । রাষ্ট্রের সভ্য হিসেবেই নাগরিক জীবনের শুরু। এরিস্টটলের মতে, “রাষ্ট্র হচ্ছে কয়েকটি পরিবার ও গ্রামের সমষ্টি, যার উদ্দেশ্য স্বয়ংসম্পূর্ণ জীবন।” এরিস্টটলের সংজ্ঞা নগররাষ্ট্র ভিত্তিক । বর্তমানকালে নগররাষ্ট্রের অস্তিত্ব নেই। আধুনিক রাষ্ট্র প্রধানত: জাতী রাষ্ট্র । তাই আধুনিক যুগে রাষ্ট্র সম্পর্কিত সংজ্ঞার পরিধি বিস্তৃত হয়েছে।

বুন্টসলির মতে, “কোন নির্দিষ্ট ভূখণ্ডে রাজনৈতিক ভাবে সংগঠিত জনসমাজই হলাে রাষ্ট্র।”

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সাবেক প্রেসিডেন্ট উড্রো উইলসন বলেন, “কোন নির্দিষ্ট ভূখণ্ডে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সংগঠিত জনগােষ্ঠীকে রাষ্ট্র বলে।”

অধ্যাপক বার্জেস- এর মতে, “রাষ্ট্র হচ্ছে মানবজাতির সেই সংঘবদ্ধ অংশ, যা ঐক্যবদ্ধভাবে সংগঠিত।”

লাস ওয়েল ও কাপান এর মতে, “সার্বভৌম ভূখণ্ডভিত্তিক গােষ্ঠীই হচ্ছে রাষ্ট্র ।”

অধ্যাপক জে.এন.গার্নার এর মতে, “রাষ্ট্র হচ্ছে এমন এক জনসমাজ যা সংখ্যায় অল্পাধিক বা বিপুল এবং কোন নির্দিষ্ট ভূখণ্ডে স্থায়ীভাবে বসাবাস করে, যা বহিঃশক্তির নিয়ন্ত্রণ থেকে স্বাধীন বা প্রায় স্বাধীন এবং যার একটি সংগঠিত সরকার রয়েছে, যার প্রতি অধিকাংশ অধিবাসী স্বাভাবিকভাবে অনুগত।”

সুতরাং রাষ্ট্র বলতে সেই জনসমষ্টিকে বােঝায়, যারা কোনাে নির্দিষ্ট ভৌগােলিক সীমানায় বসবাস করে, যাদের একটি সরকার আছে সর্বোপরি যারা বহিঃশক্তির নিয়ন্ত্রণ হতে সর্বোতভাবে মুক্ত থাকে ।

রাষ্ট্রের উপাদান

রাষ্ট্রের সংজ্ঞা বিশ্লেষণ করলে রাষ্ট্রের ৪টি উপাদান পাওয়া যায়।

ক. স্থায়ী জনসমষ্টি  – জনসমষ্টি রাষ্ট্রের প্রথম ও প্রধান উপাদান। জনসমষ্টি ছাড়া রাষ্ট্রের কথা ভাবা যায় না। আবার তেমনি জনসমষ্টির জন্যই রাষ্ট্র নামক রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানটির সৃষ্টি হয়েছে। মানুষ তার নিজস্ব প্রয়ােজনেই রাষ্ট্র গঠন করেছে । জনমানবহীন রাষ্ট্র কল্পনা করা যায় না। কোন ভূখণ্ডে নাগরিকগণ স্থায়ীভাবে বসবাস করলে সেই জনসমষ্টিকে নিয়ে রাষ্ট্র গঠিত হতে পারে । জনসংখ্যা কম বা বেশি হতে পারে। তবে রাষ্ট্রের জনসংখ্যা কম হলেও রাষ্ট্রের অস্তিত্বের কোন সমস্যা হয় না। যেমন চীনের জনসংখ্যা প্রায় একশ’ তিরিশ কোটি আবার বাংলাদেশের জনসংখ্যা প্রায় ১৬ কোটি। আবার কোন রাষ্ট্রে এক নৃ-তাত্ত্বিক জনসমষ্টি থাকতে হবে এমন কথাও নয়। একটি রাষ্ট্রের জনসংখ্যা রাষ্ট্রের প্রয়ােজন ও সম্পদের সংগে সামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়া উচিত। রাষ্ট্রের প্রশাসন ও উন্নয়নমূলক কাজ পরিচালনার জন্য চলনসই জনসমষ্টি থাকলেই রাষ্ট্র গঠিত হতে পারে ।

খ. নির্দিষ্ট ভূখণ্ড : রাষ্ট্রের দ্বিতীয় উপাদান নির্দিষ্ট ভূখণ্ড। নির্দিষ্ট ভূখণ্ড বলতে শুধু স্থলভাগকে বােঝায় না। নির্দিষ্ট ভূখণ্ড বলতে নির্দিষ্ট কোন ভৌগােলিক সীমানার স্থলভাগ, নদ-নদী, আন্তর্জাতিক স্বীকৃত সাগর ও মহাসাগরের সীমানা এর উপরিভাগের বায়ুমণ্ডলকে বােঝায়। ভূখণ্ড ছাড়া রাষ্ট্র কল্পনা করা যায় না। যাযাবর জাতি শুধুমাত্র নিদিষ্ট ভূখণ্ডের অভাবে রাষ্ট্র গঠন করতে সমর্থ হয়নি। জনসমষ্টির মত ভৌগােলিক সীমারেখার ক্ষেত্রেও কোন বাঁধা ধরা নিয়ম নেই। রাষ্ট্র ছােট বা বড় দুই-ই হতে পারে। যেমন- নেদারল্যাণ্ডের আয়তন মাত্র সাড়ে বার হাজার বর্গমাইল, কিন্তু ভারতের আয়তন প্রায় সাড়ে বার লাখ বর্গমাইল । সুতরাং আয়তন যাই হােক না কেন, রাষ্ট্রের অবশ্যই নির্দিষ্ট ভূখণ্ড থাকতে হবে ।

গ. সরকার : সরকার জনগণের মুখপাত্র। সরকার রাষ্ট্র পরিচালনা করে। রাষ্ট্র গঠনের জন্য একটি সুসংগঠিত সরকার প্রয়ােজন যার মাধ্যমে জনগণ এবং রাষ্ট্রের ইচ্ছা-অনিচ্ছা প্রকাশিত ও কার্যকর হবে। নির্দিষ্ট ভূখণ্ডে বসবাস করা বৃহৎ জনগােষ্ঠীর একটি ক্ষুদ্র অংশ নিয়ে সরকার গঠিত হবে। সরকার গঠিত হয় আইন বিভাগ, শাসন বিভাগ ও বিচার বিভাগকে নিয়ে। তবে সরকারের রূপ বা প্রকৃতি সকল রাষ্ট্রে একরূপ নয়, ফলে বিভিন্ন রাষ্ট্রে বিভিন্ন ধরনের সরকার দেখা যায়। যেমন : সংসদীয় সরকার, রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার ইত্যাদি।

ঘ. সার্বভৌমত্ব : রাষ্ট্র গঠনের সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলাে সার্বভৌমত্ব। সার্বভৌমত্ব বলতে রাষ্ট্রের চূড়ান্ত ক্ষমতাকে বােঝায়। শুধু স্থায়ী জনসমষ্টি, নির্দিষ্ট ভূখণ্ড এবং সরকার থাকলে রাষ্ট্র হয় না। এ তিনটি নির্দিষ্ট উপাদানের ভিত্তিতে ২৬ মার্চ, ১৯৭১ এর আগে আমরা বাংলাদেশ রাষ্ট্র গঠন করতে পারিনি। যখন পূর্ববাংলার জনণের পক্ষে ঐতিহাসিকভাবে গণসমর্থনে প্রাপ্ত পরম রাজনৈতিক কর্তৃত্বে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতা তথা সার্বভৌমত্ব ঘােষণা করেন তখন এই চতুর্থ উপাদানের সংযােগে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয় । সার্বভৌম ক্ষমতা না থাকার জন্য কোন রাষ্ট্রের অন্তর্গত প্রদেশ রাষ্ট্র নয় । আন্তর্জাতিক সংঘ বা প্রতিষ্ঠানগুলাে রাষ্ট্র নয়, এমনকি জাতিসংঘও রাষ্ট্র নয় । সার্বভৌম ক্ষমতার দুটি দিক রয়েছে ১। সার্বভৌম ক্ষমতা রাষ্ট্র অভ্যন্তরীণ শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষা করে। ২। সার্বভৌম ক্ষমতা দেশকে বহিঃশক্তির নিয়ন্ত্রণ হতে মুক্ত রাখতে পারে ।

 রাষ্ট্রের উৎপত্তি

রাষ্ট্রের উৎপত্তি কখন কি ভাবে হয়েছে সে সম্পর্কে রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও সমাজবিজ্ঞানীগণ একমত নন। এ ব্যাপারে তারা তাদের সমকালীন অবস্থা, রাষ্ট্রে ক্ষমতা প্রয়ােগের নীতি, বিভিন্ন রাষ্ট্রের রাজনৈতিক অবস্থা এবং কল্পনা শক্তি দ্বারা পরিচালিত হয়েছেন। তারা লক্ষ করেছেন, রাষ্ট্রবিবর্তনের এক পর্যায়ে ধর্মের গুরুত্ব অনেক বেশি ছিল। ধর্মই ছিল আনুগত্যের ভিত্তি । তাই অনেকে মনে করেন যে, ঈশ্বরই রাষ্ট্র তৈরি করেন। অতীতে দৈহিক ও সামরিক ক্ষমতাবলে শাসন ক্ষমতা দখল করে শাসকগণ জনগণকে আনুগত্য স্বীকার করতে বাধ্য করেছেন। এর ফলে কোন কোন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী শক্তিকেই রাষ্ট্রের ভিত্তি হিসেবে বর্ণনা করেছেন। আবার সপ্তদশ ও অষ্টাদশ শতাব্দীর দার্শনিক হবস্, লক, রুশাে তাদের সময়ের সামাজিক অবস্থার দ্বারা প্রভাবিত হয়ে এবং কল্পনার আশ্রয় নিয়ে চুক্তির ফলে রাষ্ট্র সৃষ্টি হয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন। রাষ্ট্রের উৎপত্তির ব্যাখ্যা বিশ্লেষণে দার্শনিকদের চিন্তাভাবনায় সমগ্র সত্যের প্রতিফলন না ঘটলেও তাদের বক্তব্যের আংশিক সত্যতা অস্বীকার করা যায় না। আসলে অনেক উপাদানের সমন্বিত অবদানে রাষ্ট্র জন্মলাভ করেছে, একথা আজ সকল রাষ্ট্রবিজ্ঞানীই সমর্থন করেন । তাদের মধ্যে গার্নারের মতে বিবর্তনের মাধ্যমে বিভিন্ন স্তর অতিক্রম করে রাষ্ট্র তার বর্তমান রূপ লাভ করেছে।

ঐশ্বরিক উৎপত্তিবাদ বা বিধাতার সৃষ্টিমূলক মতবাদ –  বিধাতার সৃষ্টিমূলক মতবাদের মূলকথা হল বিধাতা বা ঈশ্বর রাষ্ট্র সৃষ্টি করেছেন। তিনি শাসক প্রেরণ করেছেন। শাসক তার কাজের জন্য জনগণের নিকট দায়ী নয়। জনগণ নিঃশর্তভাবে শাসককে আনুগত্য দান করবে। শাসক তার ভুলত্রুটির জন্য বিধাতার নিকট দায়ী। শাসককে অমান্য করলে জনগণ একদিকে যেমন পার্থিব শাস্তি ভােগ করবে তেমনি পরকালেও শাস্তি ভােগ করবে। শাসকগণ একাধারে রাষ্ট্রীয় প্রধান ও ধর্মীয় প্রধান। প্রাচীন কালে ও মধ্যযুগে এই মতবাদের সমর্থন পাওয়া যায়। ওল্ড টেস্টামেন্টে উল্লেখ আছে যে, “বিধাতা রাজাকে মনােনয়ন দান করেছেন, বিধাতার ইঙ্গিতে রাজার। মৃত্যু হয়েছে।” ঈহুদীরা মনে করতেন, “রাষ্ট্র বিধাতার সৃষ্টি।” সেন্ট অগাস্টিন, জন অব সেলিসবারী এবং সেন্ট টমাস এ্যাকুইনাস এই মতবাদে বিশ্বাস করতেন। ইংল্যান্ডের রাজা প্রথম জেমস এবং তার পুত্র প্রথম চার্লস এই মতবাদের উপর বিশ্বাস করে প্রজাদের সকল অধিকার অস্বীকার করেছিলেন। ফ্রান্সের রাজা চতুর্দশ লুই বিধাতার সৃষ্টিমূলক মতবাদে বিশ্বাসী ছিলেন এবং নিজকে বিধাতার বরপুত্র মনে করে ঘােষণা করেছিলেন, “আমিই রাষ্ট্র।”

পিতৃতান্ত্রিক মতবাদ – এই মতবাদ অনুযায়ী পিতৃতান্ত্রিক পরিবারের সম্প্রসারিত রূপই রাষ্ট্র। স্যার হেনরি মেইনের মতে, “পিতৃতান্ত্রিক পরিবারের সম্প্রসারণের ফলে রাষ্ট্রের উৎপত্তি হয়েছে।” তিনি প্রাচীন আইন’ এবং প্রতিষ্ঠানসমূহের প্রাথমিক ইতিহাস গ্রন্থদ্বয়ে পিতৃতান্ত্রিক মতবাদের পূর্ণ ব্যাখ্যা দান করেছেন। এই মতবাদের মূলকথা হল পরিবারই আদিম সমাজের মূল প্রতিষ্ঠান এবং পুরুষই ছিলেন পরিবারের কর্তা। পুরুষের দিক থেকেই বংশ পরিচয় দেওয়া হত। পরিবারের সম্প্রসারণের ফলে গােষ্ঠীর সৃষ্টি হয়। পরিবারের প্রধান আবার গােষ্ঠীর প্রধানে পরিণত হন। গােষ্ঠীর সম্প্রসারণের ফলে রাষ্ট্রের উৎপত্তি হয়।

মাতৃতান্ত্রিক মতবাদ-  জেংক, মরগান, ম্যাকমিলান প্রমুখ চিন্তাবিদগণ এই মতবাদের সমর্থক। মাতৃতান্ত্রিক মতবাদের মূল কথা হল, মাতৃতান্ত্রিক পরিবারের সম্প্রসারণের ফলে রাষ্ট্র সৃষ্টি হয়েছে। প্রাচীন পরিবার ব্যবস্থা ছিল মাতৃতান্ত্রিক ও বহু স্বামীভিত্তিক। এজন্য কোন একক পুরুষের নামে বংশ পরিচয় দেওয়া সম্ভব হয়নি। বলে স্ত্রীর নামে পরিবার পরিচিত হত। এ ধরনের মাতৃতান্ত্রিক পরিবারের সম্প্রসারণের ফলে রাষ্ট্র সৃষ্টি হয়েছে।

বলপ্রয়োগ মতবাদ- এই মতবাদের মূলকথা হচ্ছে, সবলরা দুর্বলদেরকে দৈহিক শক্তিবলে অধীনস্থ করে তাদের উপর আইন-কানুন চাপিয়ে আনুগত্য স্বীকার করতে বাধ্য করে রাষ্ট্র গঠন করেছে। প্রাচীনকালে মানুষ ছােট ছােট গােষ্ঠী বা গােত্রে বিভক্ত হয়ে বসবাস করত। তখন আন্তঃগােষ্ঠীয় সংঘাত প্রায় নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার ছিল। পরাজিত গােষ্ঠী বিজয়ী গােষ্ঠীর অধীন হত। বিজয়ী গােষ্ঠীর প্রধানের শাসন তারা মানতে বাধ্য হত। পরবর্তীতে অন্যান্য গােষ্ঠীও পরাজিত হয়ে শক্তিশালী গােষ্ঠীর অধীন হত। এভাবে বৃহৎ জনগােষ্ঠী ও এলাকা শক্তিশালী গােষ্ঠীর অধীনস্থ হয়ে রাষ্ট্রের সীমানা বৃদ্ধি পেত। ডেভিড হিউম, জেংকস, জেলেনিক প্রমুখ রাষ্ট্রবিজ্ঞানী বলপ্রয়ােগ মতবাদের সমর্থক। জেংকস বলেন, “ঐতিহাসিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করলে দেখা যায় যে, আধুনিক সকল রাষ্ট্রব্যবস্থা সার্থক রণকৌশলের ফলশ্রুতি।” জেলেনিকের মতে, “শক্তিশালী নেতা তার অনুগামী যােদ্ধাদের সহায়তায় যখন চলনসই নির্দিষ্ট ভূখন্ডের উপর স্থায়ী আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করেছে তখনই রাষ্ট্রের উৎপত্তি হয়েছে।” বলপ্রয়ােগ মতবাদের আসল কথা বলপ্রয়ােগের ফলে রাষ্ট্র সৃষ্টি হয়েছে এবং শক্তি প্রয়ােগের দ্বারা তা টিকে থাকবে।

মার্কসীয় মতবাদ – কার্ল মার্কস একজন বস্তুবাদী দার্শনিক। তিনি সংঘাত তত্ত্ব বা রাষ্ট্র সৃষ্টির ব্যাপারে বলপ্রয়ােগ মতবাদে বিশ্বাসী ছিলেন। তার মতে সমাজে দুটি শ্রেণী বিরাজ করে- পুঁজিপতি ধনী শ্রেণি ও সর্বহারা শ্রমিক শ্রেণি। তিনি বলেন, সমাজ শ্রেণীবিভক্ত এবং পৃথিবীর ইতিহাস শ্রেণী সংগ্রামের ইতিহাস। পুঁজিপতি শ্রেণী তাদের নিজেদের স্বার্থে রাষ্ট্রযন্ত্র দখলে রাখে এবং নিজ শ্রেণীস্বার্থেই রাষ্ট্র ক্ষমতা প্রয়ােগ করে। তাদের শােষণ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য শ্রমিক শ্রেণী সংগঠিত হয়ে পুঁজিপতি শ্রেণীকে উৎখাত করে প্রভুত্ব বা সর্বহারার একনায়কত্ব কায়েম করবে। জন প্লামেনাজ মার্কসের রাষ্ট্রের উৎপত্তি সংক্রান্ত ধারণাটি এভাবে ব্যক্ত করেছেন, “সমাজ শ্রেণীবিভক্ত হলে রাষ্ট্রের আবির্ভাব ঘটে, রাষ্ট্র শ্রেণী শাসনের যন্ত্র এবং সমাজ শ্রেণীহীন হলে রাষ্ট্রের প্রয়ােজন থাকবে না।” মার্কসের মতে রাষ্ট্র কোন স্বাভাবিক প্রতিষ্ঠান নয়, বরং শ্রেণীসংঘাতের ফলশ্রুতি। শােষক ও পুঁজিপতি শ্রেণী পুলিশ, সামরিক বাহিনী, আমলা ও আদালতের মাধ্যমে রাষ্ট্রকে ধরে রাখে এবং শ্রেণী শােষণ অব্যাহত রাখে।

সামাজিক চুক্তি মতবাদ –  রাষ্ট্রের উৎপত্তির ব্যাপারে সামাজিক চুক্তি একটি কাল্পনিক মতবাদ। এই মতবাদের মূলকথা এই যে, পূর্বে মানুষ একটি প্রকৃতির রাজ্যে বাস করত। প্রকৃতির রাজ্যের মানুষ প্রকৃতির আইন অনুযায়ী চলত এবং প্রাকৃতিক অধিকার ভােগ করত। কিন্তু প্রকৃতির আইন ও প্রাকৃতিক অধিকারের স্ব স্ব ব্যাখ্যার ফলে প্রকৃতির রাজ্যে জীবন-যাপন অসম্ভব হয়ে পড়ে। এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য প্রকৃতির রাজ্যের মানুষ চুক্তির মাধ্যমে রাষ্ট্র গঠন করে। যেহেতু রাষ্ট্র চুক্তির ফল সেহেতু এই মতবাদকে সামাজিক চুক্তি মতবাদ বলে। সপ্তদশ শতাব্দীর চিন্তাবিদ টমাস হবস্ তার লেভীয়াথান গ্রন্থে, জন লক তার ‘টু ট্রিটিজেস অন সিভিল গভর্নমেন্ট’ গ্রন্থে এবং অষ্টাদশ শতাব্দীর চিন্তাবিদ রুশাে তার ‘সােশাল কনট্রাক্টগ্রন্থে সামাজিক চুক্তি মতবাদের ব্যাখ্যা দেন ও বিশ্লেষণ করেন। প্রাচীনকালেও এই মতবাদের সমর্থন মিলে। সক্রেটিস বলেছিলেন, “কারাগার থেকে পালিয়ে তিনি রাষ্ট্রের সাথে চুক্তি ভঙ্গ করতে পারেন না।” গ্লোকনের মুখ দিয়ে প্লেটো বলেছেন, “প্রকৃতির রাজ্যের ক্ষতির হাত থেকে নিজেদের রক্ষার জন্য মানুষ পরস্পর চুক্তিবদ্ধ হয়।” ম্যানেগােল্ডের লেখনীতে পাওয়া যায় “প্রজাদের চুক্তির দ্বারা ক্ষমতাপ্রাপ্ত রাজাকে প্রজাগণ অপসারণ করতে পারে। তবে হব, লক ও রুশাের লেখনীতে সামাজিক চুক্তিবাদের বলিষ্ঠ ব্যাখ্যা লক্ষ্য করা যায়। তাদের সামাজিক চুক্তি মতবাদ নিম্নে আলােচনা করা হল।

বিবর্তনমূলক মতবাদ-  রাষ্ট্রবিজ্ঞানীগণ ঐতিহাসিক মতবাদ বা বিবর্তনবাদকে রাষ্ট্রের উৎপত্তি সংক্রান্ত সঠিক মতবাদ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। কারণ রাষ্ট্রের উৎপত্তি সংক্রান্ত অন্যান্য মতবাদগুলাে তীব্রভাবে সমালােচিত হয়েছে। অধ্যাপক গার্নার বলেন, “রাষ্ট্র বিধাতার সৃষ্টি নয় অথবা উচ্চতর শক্তির ফল নয় বা প্রস্তাবের ফল নয়। বা পরিবারের বিস্তৃতির ফল নয়। বস্তুতঃপক্ষে ঐতিহাসিক ক্রমবিবর্তনের ফলে রাষ্ট্র উৎপত্তি লাভ করেছে।” অধ্যাপক বার্জেস বলেছেন, রাষ্ট্র মানব সমাজের ক্রমবিকাশের ফল। অন্যান্য মতবাদের উপর এই মতবাদের শ্রেষ্ঠত্ব এ কারণেই যে, এই মতবাদ কোন একটি উপাদানকে অগ্রাধিকার দান করে নাই বরং এই মতবাদ স্বীকার করে যে বহু উপাদানের সমন্বিত অবদানের ফলেই রাষ্ট্র জন্মলাভ করেছে।

রাষ্ট্র ও সরকারের সম্পর্ক

সরকার রাষ্ট্র গঠনের একটি উল্লেখযােগ্য ও গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। সরকারকে রাষ্ট্রের মুখপাত্র বলা হয় । সরকারের মাধ্যমে রাষ্ট্রের কর্মসূচি ও নীতিমালা প্রকাশিত ও কার্যকর হয়। সরকার ছাড়া রাষ্ট্র গঠিত হতে পারে না। আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে সরকার জনগণের প্রতিনিধিত্ব করে। অন্য কথায়, রাষ্ট্রের কাজে নিয়ােজিত শাসন বিভাগ, আইন বিভাগ ও বিচার বিভাগের সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সমষ্টিকে সরকার বলে । সরকার রাষ্ট্রের সার্বভৌম ক্ষমতাবলে শাসন কার্য পরিচালনা করে। রাষ্ট্রভেদে সরকারের রূপ ও সংগঠন আলাদা হয়ে থাকে । প্রাচীন কাল থেকে আজ অবধি বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ধরনের সরকার ব্যবস্থার উদ্ভব ঘটেছে।

সরকারের সংজ্ঞা

বিভিন্ন রাষ্ট্র চিন্তাবিদগণ বিভিন্ন সময়ে সরকারের সংজ্ঞা দিয়েছেন । অধ্যাপক লাস্কি বলেছেন, ‘সরকার হলাে রাষ্ট্রের মুখপাত্র। সরকার হলাে একটি যন্ত্রবিশেষ। যার মাধ্যমে রাষ্ট্র তার কার্যাবলি সুসম্পন্ন করে থাকে।” সরকারের মাধ্যমেই রাষ্ট্র তার ইচ্ছাসমূহের বাস্তবায়ন ঘটায়। কেউ কেউ সরকারকে রাষ্ট্রের মস্তিষ্ক বলে থাকেন। সরকারই রাষ্ট্রের চালিকাশক্তি।

রাষ্ট্রের সাথে সরকারের সম্পর্ক

রাষ্ট্র ও সরকারের গভীর সম্পর্ক বিদ্যমান । প্রাচীনকালে রাষ্ট্র ও সরকারকে একই অর্থে ব্যবহার করা হত । আপাত দৃষ্টিতে রাষ্ট্র ও সরকার শব্দ দুটি সমার্থক মনে হলেও উভয়ের মধ্যে সুস্পষ্ট পার্থক্য বিদ্যমান। রাষ্ট্র একটি বিমূর্ত ধারণা। আর সরকার সেই ধারণার বাস্তব সংগঠন। রাষ্ট্র একটি পূর্ণাঙ্গ প্রতিষ্ঠান । চারটি অন্যতম উপাদান নিয়ে রাষ্ট্র গঠিত। এর একটিকে বাদ দিয়ে রাষ্ট্র গঠিত হতে পারে না। আর সরকার রাষ্ট্রের চারটি উপাদানের একটি উপাদান। এদের মধ্যে সম্পর্ক অবিচ্ছেদ্য। অধ্যাপক গার্নার বলেন, “রাষ্ট্রকে যদি জীবদেহ মনে করা হয় তাহলে সরকার হলাে এর মস্তিষ্ক।

” তবে রাষ্ট্র ও সরকারের মধ্যে কিছু মৌলিক পার্থক্য বিদ্যমান। নিম্নে তা আলােচনা করা হলাে :

১। সরকার রাষ্ট্রের চারটি উপাদানের একটি।
২। রাষ্ট্র স্থায়ী, সরকার অস্থায়ী ও পরিবর্তনশীল।
৩। সরকার বাস্তব প্রতিষ্ঠান, রাষ্ট্র বিমূর্ত ধারণা।
৪। রাষ্ট্র মােট জনসমষ্টি নিয়ে গঠিত । সরকার মােট জনসমষ্টির একটি ক্ষুদ্র অংশ নিয়ে গঠিত।
৫। সরকারের বিভিন্ন রূপ হতে পারে, কিন্তু রাষ্ট্রের কোন পরিবর্তন সম্ভব নয় ।
৬। রাষ্ট্রের শাসন কার্য পরিচালনার জন্য সরকার পরিবর্তন হয় । কিন্তু রাষ্ট্রের পরিবর্তন হয় না।
৭। রাষ্ট্র সার্বভৌম বা চরম ক্ষমতার অধিকারী, আর সরকার সেই চরম ক্ষমতার বাস্তবায়নকারী মাত্র।
৮। রাষ্ট্র ও সরকারের মধ্যে যত পার্থক্য থাকুক না কেন, সরকার না থাকলে রাষ্ট্রকে কল্পনা করা যায় না। আর
রাষ্ট্রের ইচ্ছা-অনিচ্ছা সরকারের মাধ্যমে প্রকাশিত হয় । তাই গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে সরকার ও রাষ্ট্রের সম্পর্ক
অবিচ্ছেদ্য।

যুগে যুগে রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা বিভিন্নভাবে সরকারের শ্রেণীবিভাগ করেছেন। এদের মধ্যে এরিস্টটল, মন্টেস্কু, জ্যা জ্যাক রুশাে, ম্যাকাইভার, ম্যারিয়ট এ্যালান ও লিককের নাম বিশেষভাবে উল্লেখযােগ্য। তবে অধ্যাপক লিকক প্রদত্ত সরকারের শ্রেণীবিভাগটি সর্বাপেক্ষা সুস্পষ্ট এবং সর্বাধুনিক, তিনি সরকারকে চার ভাগে ভাগ করেছেন। অধ্যাপক লিকক প্রদত্ত সরকারের শ্রেণীবিভাগটি নিম্নরূপ :

সার্বভৌম ক্ষমতার ভিত্তিতে সরকার দুই ভাগে বিভক্ত –

  • একনায়কতন্ত্র
  • গণতন্ত্র

গণতন্ত্র সার্বভৌম ক্ষমতা জনগণের হাতে থাকে। আর একনায়কতন্ত্রে ক্ষমতা একজনের হাতে থাকে । একদল, একনেতা, এক জাতি একনায়কতন্ত্রের শ্লোগান।

রাষ্ট্র প্রধানের ক্ষমতা লাভের পদ্ধতির ভিত্তিতে গণতান্ত্রিক সরকারকে দুটি শ্রেণীতে ভাগ করেছেন –

  • নিয়মতান্ত্রিক রাজতন্ত্র
  • প্রজাতন্ত্র

নিয়মতান্ত্রিক রাজতন্ত্রে রাজা নামমাত্র রাষ্ট্রপ্রধান, প্রকৃত শাসন ক্ষমতা ন্যাস্ত থাকে জনগণ কর্তৃক নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে । ইংল্যাণ্ডের শাসন ব্যবস্থা এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ।

আইন ও শাসন বিভাগের সম্পর্কের ভিত্তিতে গণতান্ত্রিক সরকার দুই ভাগে বিভক্ত-

  • মন্ত্রিপরিষদ শাসিত সরকার বা সংসদীয় সরকার
  • রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার ।

শাসন বিভাগ আইন বিভাগের নিকট দায়ী থাকলে তাকে মন্ত্রিপরিষদ শাসিত সরকার বলে। যেমন- বাংলাদেশ ও ভারতের সরকার। আর আইন বিভাগের নিকট শাসন বিভাগ দায়ী না থাকলে তাকে রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার বলে । যেমন -আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের সরকার। রাষ্ট্রপ্রধান জনগণ কর্তৃক নির্বাচিত তিনি প্রকৃত শাসক।

কেন্দ্র ও প্রদেশের মধ্যে ক্ষমতা বণ্টনের ভিত্তিতে গণতান্ত্রিক সরকারকে দুই শ্রেণীতে বিভক্ত করা হয়েছে।

  • এককেন্দ্রিক
  • যুক্তরাষ্ট্রীয় ।

এককেন্দ্রিক শাসন ব্যবস্থায় রাষ্ট্রের সকল ক্ষমতা সংবিধানের মাধ্যমে কেন্দ্রের ওপর ন্যাস্ত থাকে। কেন্দ্র প্রাদেশিক সরকার বা আঞ্চলিক সরকারের হাতে ক্ষমতা ন্যাস্ত করে তা নিয়ন্ত্রণ করে। অপরদিকে যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসন ব্যবস্থা। বলতে , যে শাসন ব্যবস্থায় সংবিধানের মাধ্যমে কেন্দ্র ও প্রাদেশিক সরকারের হাতে ক্ষমতা বণ্টন করে দেয়া হয় তাকে বােঝায়। যেমন- মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ভারত ।

অধ্যাপক লিককের সরকারের শ্রেণীবিভাগ নিমে রেখাচিত্রের মাধ্যমে দেখানাে হলাে

image

অর্থনৈতিক ভিত্তিতে সরকারকে দুই ভাগে ভাগ করা যায় । যথা

  • পুঁজিবাদী
  • সমাজতান্ত্রিক

পুঁজিবাদী যে ব্যবস্থায় ব্যক্তি মালিকানা, বিনিয়ােগ ও মুনাফা অর্জনের উপর সরকারের কোন বাধা নিষেধ থাকে না তাকে পুঁজিবাদী সরকার বলে। যেমন – মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। ২। সমাজতান্ত্রিক : আর যে ব্যবস্থায় ভূমি, শ্রম, মূলধন ও ব্যবস্থাপনা সহ উৎপাদনের সকল উপাদান রাষ্ট্রীয় মালিকানায় থাকে তাকে সমাজতান্ত্রিক সরকার বলে। যেমন- চীন ।

সরকার রাষ্ট্র গঠনের একটি উল্লেখযােগ্য ও অন্যতম উপাদান। সরকারের মাধ্যমে রাষ্ট্রের কর্মসূচি ও নীতিমালা প্রকাশিত ও কার্যকর হয়। সরকার রাষ্ট্রের মুখপাত্র সরকার রাষ্ট্রের ইচ্ছার বাস্তবায়ন করে। সরকার বলতে সেই জনগণকে বুঝায় যারা আইন প্রণয়ন, শাসন পরিচালনা ও বিচার কাজের সাথে জড়িত। সরকারের সাথে রাষ্ট্রের গভীর সম্পর্ক রয়েছে। সরকারের বিভিন্ন শ্রেণীবিভাগ রয়েছে। ক্ষমতার ভিত্তিতে সরকার দুই ধরনের। গণতন্ত্র ও একনায়কতন্ত্র। গণতান্ত্রিক সরকার দুই ধরনের নিয়মতান্ত্রিক রাজতন্ত্র ও প্রজাতন্ত্র । আঞ্চলিক ক্ষমতা বণ্টনের ভিত্তিতে গণতান্ত্রিক সরকার দু ধরনের । এককেন্দ্রিক ও যুক্তরাষ্ট্রীয় । আইন ও শাসন বিভাগের সম্পর্কের ভিত্তিতে গনতান্ত্রিক সরকার আবার দু ধরনের, সংসদীয় সরকার ও রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার। অর্থনৈতিক ভিত্তিতে সরকার পুঁজিবাদী ও সমাজতান্ত্রিক দুই ধরনের হয়ে থাকে ।

এসাইনমেন্ট নং ১

এসাইনমেন্ট টপিক মূল বইয়ের প্রথম অধ্যায় – “পৌরনীতি ও নাগরিকতা” থেকে নেওয়া হয়েছে ।

প্রশ্ন : বাংলাদেশে বিদ্যমান পরিবার ব্যবস্থা ও একটি আদর্শ পরিবারের কার্যাবলি বিশ্লেষণ ।

উত্তর

পরিবার একটি আদিম সামাজিক প্রতিষ্ঠান। মানুষ একা বসবাস করতে পারে না। সঙ্গকামী মানুষ স্বভাবতই পরস্পর মিলেমিশে একত্রে বসবাস করতে চায়। মানুষের এই আকাংখার অভিব্যক্তি হল পরিবার। পরিবারের ভিত্তি হল জৈবিক যৌনতা। কারণ নারী-পুরুষ বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয় এবং সন্তান-সন্ততি জন্ম দান করে। নারী-পুরুষ পরস্পরের প্রতি আকর্ষণ ও সন্তান বাৎসল্য তাদেরকে পারিবারিক জীবন যাপনে অনুপ্রাণিত করে। স্নেহ, মায়া-মমতা ও নিরাপত্তার আকাঙ্ক্ষা পরিবারের ভিত্তি। পরিবারের বিকল্প চিন্তা করা যায় না। বাংলাদেশে বিদ্যমান পরিবার ব্যবস্থা ও একটি আদর্শ পরিবারের কার্যাবলি বিশ্লেষণপূর্বক আলোচনা করা হল –

পরিবারের ধারণা 

পরিবার একটি ক্ষুদ্র সামাজিক বর্গ। পরিবার বলতে সেই সামাজিক ক্ষুদ্র সংস্থাকে বুঝায় যেখানে এক বা একাধিক পুরুষ তার বা তাদের স্ত্রী-পুত্র-কন্যা ও অন্যান্য পরিজন নিয়ে একত্রে বসবাস করে।

অধ্যাপক আর এম ম্যাকাইভার পরিবারের সংজ্ঞা দিয়ে বলেন, “পরিবার হল ক্ষুদ্র ও স্থায়ী বর্গ, যার। উদ্দেশ্য সন্তান-সন্ততির জন্মদান ও লালন পালন করা।”

পরিবারের প্রকারভেদ

বংশ পরিচয় ও নিয়ন্ত্রণের ধারা বংশ পরিচয় ও নিয়ন্ত্রণের ধারার ভিত্তিতে পরিবারকে দুই শ্রেণীতে ভাগ করা যায়।

যথা-

(ক) পিতৃতান্ত্রিক
(খ) মাতৃতান্ত্রিক পরিবার।

(ক) পিতৃতান্ত্রিক পরিবার ; যখন পিতা পরিবারের কর্তা অথবা পিতার দিক হতে পরিবার পরিচিত হয় তখন তাকে পিতৃতান্ত্রিক পরিবার বলে। সমাজবিজ্ঞানী হেনরি মেইন এই পরিবার ব্যবস্থাকে আদি ও অকৃত্রিম বলে উল্লেখ করেছেন।

(খ) মাতৃতান্ত্রিক পরিবার : যখন মাতার দিক হতে বংশ পরিচয় দেওয়া হয় এবং মাতা পরিবারের প্রধান হন তখন তাকে মাতৃতান্ত্রিক পরিবার বলে। প্রাচীনকালে মিশর ও তিব্বতে এই ধরনের পরিবার-ব্যবস্থা বিরাজমান ছিল। বর্তমানে বাংলাদেশ ও আসামের খাসিয়া গারাে নৃ-তাত্ত্বিক গােন্তীর মধ্যে, গারাের মধ্যে এই ধরনের পরিবার দেখা যায়।

বিবাহ প্রথা বিবাহ প্রথার উপর ভিত্তি করে পরিবারকে তিন শ্রেণীতে ভাগ করা যায়।

যেমন—

(ক) একপত্নীক – যদি একজন স্বামী একজন স্ত্রী গ্রহণ করে পরিবার গঠন করে তবে তাকে একপত্নীক পরিবার বলে। এটি বর্তমান কালের প্রচলিত পরিবারব্যবস্থা।

(খ) বহুপত্নীক – যখন একজন পুরুষ একাধিক স্ত্রী বিবাহ করে পরিবার গঠন করে তখন তাকে বহুপত্নীক পরিবার বলে। অর্থনৈতিক কারণে এ ধরনের পরিবারব্যবস্থা কমে যাচ্ছে।

(গ) বহুপতি পরিবার- যখন একজন স্ত্রী একের অধিক স্বামী গ্রহণ করে পরিবার গঠন করে তখন তাকে বহুপতি পরিবার বলে। হিন্দু ধর্মে মহাভারতে পঞ্চ পান্ডবের এক স্ত্রী দ্রৌপদির কথা উল্লেখ আছে।

পারিবারিক কাঠামাে ও আকৃতি- পারিবারিক কাঠামাে ও আকৃতির ভিত্তিতে পরিবারকে দুই শ্রেণীতে ভাগ করা যায়।

(ক) একক পরিবার –যখন স্বামী-স্ত্রী তাদের উপর নির্ভরশীল সন্তান-সন্ততি নিয়ে পরিবার গঠন করে তখন তাকে একক পরিবার বলে।

(খ) যৌথ পরিবার – যে পরিবারে পিতামাতা তাদের নিজেদের সন্তান-সন্ততি এবং সন্তান-সন্ততিগণের সন্তান-সন্ততি নিয়ে একসঙ্গে বসবাস করে তাকে যৌথ পরিবার বলে।

যৌথ পরিবার হ্রাস ও একক পরিবার বৃদ্ধি পাওয়ার কারণ

 

সীমিত অর্থনৈতিক যােগানদাতাঃ একটি যৌথ পরিবার। অনেকগুলাে মানুষের সমন্বয়ে গঠিত হয়ে থাকে,যার লােক সংখ্যা ২৫ থেকে ৩০ জন অথবা তার উর্ধ্বে থাকলেও অনেক যৌথ পরিবারে অর্থনৈতিক যােগানদাতা মাত্র ২ থেকে ৪ জন থাকেন আবার তাদের আয়ের পরিমাণও সমান না। এ অবস্থায় যৌথ পরিবারে থেকে পরিবার চালনা অত্যান্ত কষ্টসাধ্য হয় এমনকি তারা নিজের এবং নিজের স্ত্রী সন্তানের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করেই যৌথ পরিবার ভেঙ্গে মা বাবা দাদা দাদী অন্যান্য সদস্যদের ছেড়ে একক পরিবার গঠনের চিন্তা করেন।

ব্যক্তি স্বার্থপরতাঃ যৌথ পরিবারের অর্থনৈতিক যােগানদাতা ব্যক্তিগণ অনেক সময় সবার সাথে মিলেমিশে যৌথ সম্পত্তি গড়ে তােলার পাশাপাশি যৌথ পরিবারের সদস্যদের অজান্তে নিজের নিজের স্ত্রী অথবা সন্তানের নামে আলাদা সম্পত্তি গড়ে তুলেন।পরবর্তীতে তা পরিবারের অন্যান্য সদস্যগণের মধ্যে জানাজানি হলে ঝগড়ার হয় আর যৌথ পরিবার ভেঙ্গে যাওয়ার প্রবণতা দেখা দেয়।

কর্মজীবীদের সংখ্যা বৃদ্ধিঃ পরিবারের কর্মজীবী সদস্যদের সংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে কর্মজীবী সদস্যগণ চাকুরীর সুবাদে দীর্ঘদিন তাদের যৌথ পরিবারের বাহিরে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন প্রান্তে থাকতে হয়। ফলশ্রুতিতে এক সময় তাদের মধ্যে যৌথ পরিবারে থাকার আগ্রহ কমে যায় বা তাদের সন্তানাদি ও মা বাবার সাথে একক পরিবারে থাকতে অভ্যস্ত থাকায় তারা আর যৌথ পরিবারে ফিরে আসতে চায় না। এমনকি তাদের মধ্যে একটি স্বাধীনচেতা মনােভাব সৃষ্টি হয় তখন তারা তাদের পরিবারের কর্তাব্যক্তির বিভিন্ন সিন্ধান্ত মানতেও নারাজ। ফলে যৌথ পরিবার ভেঙ্গে যেতে থাকে।

ব্যক্তিগত আধিপত্য বিস্তারঃ বর্তমান সমাজে যৌথ পরিবার ভেঙ্গে যাওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ হলাে ব্যক্তিগত আধিপত্য বিস্তার। পরিবারের প্রত্যেক ব্যক্তি চান পরিবারের সকল সদস্যকে নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখতে। এতে পরিবারের অন্যদের মধ্যে পরিবার ভেঙ্গে একক পরিবার গঠনের প্রবণতা দেখা যায়।

পরিবারের কার্যাবলী

পরিবারের কাজের দিকে খেয়াল করলেই বুঝা যায় পরিবারের কাজের গুরুত্ব কতখানি এবং পরিবার কি কাজ করে। পরিবার সাধারণত নিম্নলিখিত কাজগুলাে করে থাকে :

(১) জৈবিক কাজ : পরিবারের অন্যতম কাজ সন্তান-সন্ততির জন্মদান এবং লালন-পালন। এই কাজটি পরিবারের ভিত্তি। কেননা যৌনতা, নারী-পুরুষের একে অপরের প্রতি আকর্ষণ ও সন্তান-বাৎসল্যের কারণেই মানুষ পরিবার গঠন করে। অনেক উন্নত দেশে শিশু ভূমিষ্ঠ হওয়া থেকে লালন-পালনের নানা দায়িত্ব শিশু-সদন বা শিশুমঙ্গল প্রতিষ্ঠান ও হাসপাতালগুলাে পালন করে থাকে। তবে পরিবারের মধ্যে যে আদর-স্নেহ ও মায়া-মমতায় শিশু বিকশিত হয় তার বিকল্প কিছুই সৃষ্টি করা সম্ভব নয়।

(২) শিক্ষামূলক কাজ : পরিবারকে সমাজ জীবনের শাশ্বত বিদ্যালয় বলা হয়। শিশুরা প্রথম শিক্ষা, বর্ণ পরিচয় ও যােগ-বিয়ােগ পরিবারেই শিখে। এমনকি বড় হয়ে স্কুলে যে শিক্ষা দেওয়া হয় তাও পরিবারের নিয়ন্ত্রণে পূর্ণতা পায়। যেমন- পরিবারে মাতাপিতার সাহায্য ও সহযােগিতায় স্কুলের শিক্ষার ভিত্তি মজবুত হয়। শুধু তাই নয় শিশুরা ধর্মীয় শিক্ষা, আদব-কায়দা, শিষ্টাচার, বড়দের প্রতি সম্মান ও ছােটদেরকে ভালবাসার শিক্ষা পরিবার থেকে লাভ করে। তাই শিশুশিক্ষার জন্য প্রাথমিক বিদ্যালয়, কিন্ডারগার্ডেন প্রভৃতি থাকলেও নৈতিক মূল্যবােধ ও মানবতাবােধের শিক্ষা পরিবারের মত অন্য কোন প্রতিষ্ঠান দিতে পারে না।

(৩) অর্থনৈতিক কাজ : অতীতে পরিবারের মধ্যেই অর্থনৈতিক কার্যাবলী সম্পাদিত হত। শিকার, মৎস্য চাষ ও সংগ্রহ, কুটির শিল্প প্রভৃতি কাজ পরিবারের সদস্যরা সম্পাদন করে জীবন ধারণ করত। তখন তাদের চাহিদা কম ছিল বলে পরিবার সদস্যদের সকল চাহিদা পূরণ করতে পারত। কিন্তু বর্তমানকালে অর্থনৈতিক চাহিদা বৃদ্ধি ও আয়ের ক্ষেত্র সম্প্রসারণের ফলে পরিবারের সদস্যগণ অফিসআদালত, কলকারখানা ও নানাবিধ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে আয় করে থাকে। তবে আজকাল আবার পরিবারমুখী আয়ের পথ উন্মােচিত হয়েছে। হাঁস-মুরগী পালন, মাছ চাষ, ফল ও ফুলের বাগান তৈরি, বাঁশ ও কাঠের কাজ, সেলাই ও বুনন কাজ করে পরিবারের সদস্যগণ আয় বাড়িয়ে সুখ-শান্তি ও স্বচ্ছলতা বৃদ্ধি করছেন। পরিবারের সদস্যগণের বিভিন্ন ক্ষেত্র থেকে অর্জিত আয় পরিবারের মধ্যে খরচ করে পরিবার গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক কাজ করে।

(৪) মনস্তাত্ত্বিক কাজ- স্নেহ, মায়া-মমতা, ভালবাসা ও আদর-যত্নে শিশুরা লালিত-পালিত হয় । পিতামাতার স্নেহে প্রতিপালিত শিশু সমাজে চলার পথে উদারতা, সহনশীলতা, দয়ামায়া প্রভৃতি মানবিক গুণাবলী দ্বারা পরিচালিত হয়। এর ফলে সুন্দর ও সুশৃংখল সমাজ গড়ে উঠে। পরিবারের এ কাজের কোন বিকল্প সৃষ্টি করা সম্ভব নয়।

(৫) নৈতিক কাজ :  পরিবার তার সদস্যদেরকে নৈতিক শিক্ষা দান করে। সত্য কথা বলা, মিথ্যা না। বলা, পরচর্চা না করা প্রভৃতি নৈতিক কথা ও কাজের শিক্ষা শিশুরা পরিবার থেকেই অর্জন করে।

(৬) ধর্মীয় কাজ- ধর্মীয় নিয়মাবলী ও ধর্ম পালনের শিক্ষা পরিবার থেকেই অর্জিত হয়। সৃষ্টিকর্তার প্রতি আনুগত্য, নবী-রাসুল বা দেবদেবীর প্রতি ভক্তি শিশুরা মাতাপিতার নিকট থেকে অর্জন করে। যে পরিবারের মাতাপিতা ধার্মিক সেই পরিবারের সন্তান-সন্ততিরাও সাধারণত ধার্মিক হয়ে থাকে এবং বড় হয়ে ধর্ম পালন অব্যাহত রাখে।

(৭) অবকাশমূলক কাজ : পরিবার চিত্তবিনােদন বা অবকাশ ও মনােরঞ্জনমূলক কাজ করে থাকে। শিশুরা বাবা-মা এবং দাদা-দাদীর নিকট থেকে গল্প, কবিতা ও ছড়া শুনে আনন্দ লাভ করে। এক সময়ে পুঁথিপাঠ, রাজ-রাজরার গল্প-কাহিনী প্রভৃতির আসর জমিয়ে পরিবারের সদস্যরা আনন্দ লাভ করত। আজকাল সিনেমা, থিয়েটার, নাট্যমঞ্চ, ক্লাব, প্রভৃতি বিনােদনের ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে। তবুও বর্তমানকালে রেডিও, টেলিভিশন, টেপরেকর্ডার, ভি.সি.আর, পত্র-পত্রিকা প্রভৃতির মাধ্যমে পরিবারের সদস্যগণ পরিবারেই চিত্ত বিনােদনের কাজ করে থাকে।

(৮) সামাজিক কাজ :  পরিবার সমাজ জীবনের অন্যতম একক এবং আদি সামাজিক প্রতিষ্ঠান। সমাজবিজ্ঞানীগণ পরিবারের সম্প্রসারণকে সমাজের উৎপত্তির কারণ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। পরিবারের মাধ্যমে সামাজিক লেন-দেন, চাল-চলন, আচার-আচরণ ও সহযােগিতার শিক্ষা এবং বংশ মর্যাদা লাভ করা যায়। পারিবারিক জীবনের সংঘবদ্ধতা থেকেই মানুষ সমাজের গােষ্ঠীবদ্ধ জীবনের শিক্ষালাভ করে। তাছাড়া পরিবারের নৈতিক শিক্ষা সামাজিক মূল্যবােধ বিকাশে সহায়তা করে। পরিবার সামাজিকীকরণের ভূমিকা পালন করে সদস্যদেরকে সমাজে বসবাসের উপযােগী করে গড়ে তােলে।

(৯) রাজনৈতিক কাজ : পরিবার ক্ষুদ্র রাষ্ট্র বিশেষ। পরিবারে শাসক-শাসিতের সম্পর্ক বিরাজ করে। আনুগত্য ও নিয়মানুবর্তিতার প্রথম পাঠ আমরা পরিবারের মধ্যে লাভ করি। আদেশ দান ও আনুগত্যের শিক্ষা পরবর্তীতে রাষ্ট্রীয় জীবনে পরিব্যাপ্ত হয় এবং আদর্শ রাষ্ট্রের অনুকূল পরিবেশ রচিত হয়। তাছাড়া পরিবারের বিশেষ রাজনৈতিক আদর্শ ও চিন্তাধারা এবং পরিবারের সদস্যদের মধ্যে পারস্পরিক রাজনৈতিক আলােচনা থেকে তাদের উপর রাজনৈতিক মতাদর্শের প্রভাব বিস্তার করে। বিশেষ দলের প্রতি সমর্থনের ক্ষেত্রে পরিবারের রাজনৈতিক আদর্শ ও সমর্থনের প্রতিফলনও ঘটে।

উপরিউক্ত আলােচনা থেকে সহজেই অনুধাবন করা যায় যে, পরিবার অনেক কাজ করে থাকে এবং | কোন কাজের গুরুত্ব কম নয়। একটি আদর্শ পরিবার একটি আদর্শ সমাজ গড়ে তুলতে সাহায্য করে।


২০২১ সালের এসএসসির সকল বিষয়ের এসাইনমেন্ট প্রশ্ন ও উত্তর দেখুন এখান থেকে 

সুহৃদ,
অতিমারির কারণে মাউশি (মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর) কর্তৃক পরিচালিত সাময়িক বিকল্প শিক্ষা কার্যক্রম “ এসাইনমেন্ট ”। এসাইনমেন্ট শব্দটি স্নাতক/স্নাতোকত্তর সহ শিক্ষার উচ্চ পর্যায়ের ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে পরিচিত একটি পদ্ধতি হলেও মাধ্যমিক ও নিম্নস্তরের শিক্ষার্থীদের কাছে এটি একেবারেই নতুন। দীর্ঘ ৫ বছর ধরে বাংলাদেশের প্রায় সকল স্তরের শিক্ষার বিভিন্ন প্রকার সঠিক তথ্য ডিজিটাল উপায়ে সরবরাহের ধারাবাহিকতায় এডমিশনওয়্যার(admissionwar) এসাইনমেন্টের ক্ষেত্রেও বিভিন্ন প্রকার তথ্য যেমনঃ এসাইনমেন্ট সম্পর্কিত আপডেট ও এসাইনমেন্টের এর নমুনা উত্তর সরবরাহ করে আসছে।
কিন্তু, সম্প্রতি আমরা আমাদের ফেসবুক পেইজ সহ বিভিন্ন মাধ্যম হতে জানতে পেরেছি শিক্ষার্থীরা এই নমুনা উত্তর দেখে দেখে হুবহু লিখছে।
এসাইনমেন্ট এর নমুনা উত্তরের কৈফিয়তঃ
যেহেতু মাউশির-র এই এসাইনমেন্ট কার্যক্রমটি মাধ্যমিক ও নিম্নস্তরের শিক্ষার্থীদের জন্য সম্পুর্ণ নতুন তাই তারা যাতে এই নমুনা উত্তর দেখে দিক নির্দেশনা নিতে পারে , এসাইনমেন্ট কার্যক্রমের উদ্দেশ্য সম্পর্কে ভালোভাবে বুঝতে পারে এবং এই করোনা কালীন দুঃসময়ে তারা যেন(বিশেষ করে প্রত্যন্ত অঞ্চলের শিক্ষার্থীরা) চলমান শিক্ষা কার্যক্রম সম্বন্ধে সম্যক অবগত থাকে তারই ক্ষুদ্র প্রয়াস আমাদের।
দায় অস্বীকারঃ
কলম থেকে শুরু করে তলোয়ার। সবকিছুর ভালো-মন্দ নির্ভর করে আপনি সেটা কিভাবে নিচ্ছেন।ডিনামাইট(বোমা) যেমন পাহাড় গুড়িয়ে সমতল করে চাষাবাদের যোগ্য করে মানুষকে অনাহারে মৃত্যুর পথ থেকে বাচিয়ে এনেছিলো, আজ সেই বোমাই লক্ষ লক্ষ লোকের মৃত্যুর কারন। তাই যেকোন বিষয়ের সঠিক ব্যবহারটাই আমাদের কাম্য।
এডমিশনওয়্যার(admissionwar) ওয়েবসাইটে প্রদত্ত এসাইনমেন্ট কার্যক্রম মহৎ উদ্দেশ্যে পরিচালিত. সুতরাং এটি কিভাবে আপনি বা আপনারা ব্যবহার করছেন সেটা একান্তই আপনাদের ব্যক্তিগত ব্যাপার। এবং তার জন্য শুধুমাত্র এবং কেবল মাত্র আপনারাই দায়ী। এডমিশনওয়ার এই সংক্রান্ত কোন দায় বহন করবেনা।

প্রিয় ভিজিটর, এখানে উপস্থাপিত সকল তথ্য উপাত্ত অভিজ্ঞ লোক দ্বারা ইন্টারনেট থেকে সংগ্রহিত । উল্লেখিত কোন তথ্যের ভুল যদি আপনার নিকট দৃশ্যমান হয় তবে অতিসত্ত্বর তা আমাদের ইমেইলের ([email protected]) মাধ্যমে অবহিত করার জন্য অনুরোধ করছি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back to top button
error: কন্টেন্ট সংরক্ষিত !!