এইচএসসি এসাইনমেন্ট ২০২১

এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান এসাইনমেন্ট নমুনা সমাধান ২০২১

২০২১ সালের এইচ এস সি সমাজ বিজ্ঞান এসাইনমেন্ট প্রশ্ন ও নমুনা উত্তর পিডিএফ । এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান এসাইনমেন্ট সমাধান আমাদের ওয়েবসাইটে যুক্ত করা হয়েছে । পরীক্ষার্থীদের জন্য পূনর্বিন্যাসকৃত পাঠ্যসূচির আলােকে মোট পনের সপ্তাহব্যাপী এসাইনমেন্ট প্রকাশ করা হবে । নিচে সকল সপ্তাহের এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান অ্যাসাইনমেন্ট সমাধান যুক্ত করা হবে ।

এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান এসাইনমেন্ট নমুনা সমাধান ২০২১

এসাইনমেন্ট নির্দিষ্ট তারিখে মধ্যে সুবিধাজনক সময়ে সরকার ঘােষিত স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণপূর্বক শিক্ষার্থীরা তাদের অ্যাসাইনমেন্ট সম্পন্ন করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জমা (সরাসরি/অনলাইনে) প্রদান করবে। প্রত্যেক ধাপের এসাইনমেন্ট জমা নেওয়ার পর পরবর্তী ধাপের অ্যাসাইনমেন্ট যথা নিয়মে প্রকাশ করা হবে। বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে, নির্দিষ্ট কভার পেইজ ব্যতীত অন্য কোন কভার পেইজ ব্যবহার করা যাবে না । কাভার পৃষ্ঠার উপরের অংশ ইংরেজিতে নির্ভুলভাবে পূরণ করতে হবে এবং নির্ধারিত অংশ ব্যতীত কাভার পৃষ্ঠার অন্য কোনাে স্থানে বা অপর পৃষ্ঠায় কোনাে কিছু লেখা যাবে না ।

এইচএসসি সমাজ বিজ্ঞান এসাইনমেন্ট প্রশ্ন ও উত্তর

এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের পনের সপ্তাহে সমাজবিজ্ঞান বিষয়ে মোট দশটি এসাইনমেন্ট জমা দিতে হবে । প্রত্যেক সপ্তাহের প্রশ্ন ও নমুনা সমাধান আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে । নিচে প্রকাশিত এসাইনমেন্ট সমূহের প্রশ্ন ও উত্তর দেওয়া হল –

এসাইনমেন্ট নং ২ (তৃতীয় সপ্তাহ)

এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান ২য় এসাইনমেন্ট দ্বিতীয় পত্র বইয়ের প্রথম অধ্যায়ঃ বাংলাদেশে সমাজবিজ্ঞান চর্চার বিকাশ থেকে নেওয়া হয়েছে ।

প্রশ্ন:  বাংলাদেশে সমাজবিজ্ঞান চর্চা, প্রয়ােজনীয়তা ও বিকাশধারা ।

HSC-3rd-Week-2021-admissionwar-com-07

 উত্তর

সমাজ, সভ্যতা ও সংস্কৃতির এক প্রাচীন জনপদ হচ্ছে বাংলাদেশ। ইতিহাস ও ঐতিহ্যের নানা বাক পেরিয়ে বাংলাদেশ আজ এক অপার সম্ভাবনার দেশ। আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে দরিদ্র দেশটি আজ উন্নয়নশীল দেশের কাতারে। সনাতন কৃষি অর্থনীতির পরিবর্তে নগরকেন্দ্রিক শিল্প ও সেবাভিত্তিক অর্থনীতি বিকশিত হওয়ায় এদেশের সমাজ কাঠামাে এবং সামাজিক সম্পর্ক ভীষণভাবে প্রভাবিত হচ্ছে। এ প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের পরিবর্তনশীল সমাজ সম্পর্কে অধ্যয়নের অপরিহার্য শাস্ত্র হচ্ছে সমাজবিজ্ঞান। ভারতীয় দার্শনিক কৌটিল্য (খ্রিস্টপূর্ব ৩৫০-২৭৫ অব্দ) বিক্ষিপ্তভাবে সমাজবিজ্ঞানের নানা দিক নিয়ে আলােচনা করেন। তিনি তাঁর ‘অর্থশাস্ত্র গ্রন্থে তল্কালীন ভারত বর্ষের আইন, রাষ্ট্র, রাজনীতি, প্রশাসন, অর্থনীতি, কৃষি, শিল্প, সমাজনীতি ও ধর্মীয় বিধিনিষেধ সম্পর্কে তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক ধ্যান-ধারণা সম্পর্কে আলােচনা করেন। যুগে যুগে অনেক পর্যটক, পরিব্রাজক, যােদ্ধা, ধর্ম প্রচারক, দার্শনিক, ইতিহাসবেত্তা এই বঙ্গভূমিতে এসেছেন। যেমন- হিউয়েন সাং, আবুল ফজল, আলবেরুনি, ইবনে বতুতা প্রমুখ এর গ্রন্থে তৎকালীন বাংলার অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, ভৌগােলিক ও জীবনধারার বিশেষ করে উৎপাদন ব্যবস্থার বর্ণনা পাওয়া যায়।

এদেশের অর্থনীতি, সমাজনীতি, কৃষি, শিল্প, সমাজ কাঠামাে, পরিবার, বিবাহ, জ্ঞাতি সম্পর্ক ইত্যাদি বিষয় নিয়ে তাঁরা আলােচনা ও বিশ্লেষণ করেছেন। সামাজিক জীব হিসেবে বাংলাদেশের মানুষের বিভিন্ন অনুষ্ঠান-প্রতিষ্ঠানএবং ব্যবহারিক বিষয়াদি নিয়ে সমাজবিজ্ঞান আলােচনা করে বিধায় বাংলাদেশে এর পাঠের গুরুত্ব রয়েছে। বাংলাদেশের মানুষ কীভাবে জীবন-যাপন করে, তাদের আচার-আচরণ, রীতি-নীতি সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান লাভ করার প্রয়ােজন রয়েছে। সামাজিক উন্নয়ন, সমাজ সংস্কারমূলক কার্যক্রম ইত্যাদি বিষয়ে জানার জন্য সমাজবিজ্ঞান পাঠের প্রয়ােজনীয়তা রয়েছে। বাংলাদেশে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে সমাজবিজ্ঞানের বিকাশে যে মনীষী কাজ করেছেন তিনি অধ্যাপক নাজমুল করিম। তাঁর বিভিন্ন লেখা বাংলাদেশে সমাজবিজ্ঞান বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে।

 বাংলাদেশে সমাজবিজ্ঞান চর্চর পটভূমি

মানব সমাজকে বুঝতে হলে এবং সমাজ কাঠামাে অনুধাবন করতে হলে সমাজবিজ্ঞান চর্চার বিকল্প নেই। সমাজ IE কাঠামাে, সামাজিক পরিবর্তনের গতিধারা, সামাজিক পরিবর্তনের কারণ, সামাজিক সমস্যা সংক্রান্ত বিষয়াদি,
পরিবার, রাষ্ট্র, সম্পত্তি, সামাজিক শ্রেণি, ধর্ম-বর্ণ ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কে সম্যক ধারণা এবং বিশ্লেষণে সমাজবিজ্ঞান চর্চার গুরুত্ব অপরিসীম। বাংলাদেশের প্রাচীন সমাজ ব্যবস্থা এবং এর গতি প্রকৃতি সমাজবিজ্ঞান অধ্যয়নের পটভূমি তৈরি করেছে।

বাংলাদেশের মানুষের সংস্কৃতি, সংস্কৃতির পরিবর্তন, সামাজিক পরিবর্তন, রাজনীতির দর্শন, ঐতিহাসিক দর্শন ইত্যাদি বিষয় সমাজবিজ্ঞান চর্চার পটভূমি তৈরি করেছে। খ্রিস্টের জন্মের পূর্ব থেকেই সমাজবিজ্ঞান চর্চার প্রমাণ ভারতীয় উপমহাদেশে রয়েছে। ভারতীয় দার্শনিক কৌটিল্য (খ্রিস্টপূর্ব ৩৫০-২৭৫ অব্দ) গভীরভাবে সমাজ কাঠামাের গুরুত্বপূর্ণ উপাদানসমূহ নিয়ে আলােচনা করেন। তিনি তাঁর ‘অর্থশাস্ত্র’ গ্রন্থে তল্কালীন ভারতের আইন, রাষ্ট্র, রাজনীতি, প্রশাসন, অর্থনীতি, কৃষি, শিল্প, সমাজনীতি ও ধর্মীয় বিধিনিষেধ সম্পর্কে তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক বিষয়সমূহ আলােচনা করেন। গ্রিক পণ্ডিত প্লেটো (খ্রিস্টপূর্ব ৪২৭-৩৪৭ অব্দ), এরিস্টটল (খ্রিস্টপূর্ব ৩৮৪-৩২২ অব্দ) প্রমুখের সমাজচিন্তা সমাজবিজ্ঞান উদ্ভবে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে। মধ্যযুগের বিখ্যাত মুসলিম চিন্তাবিদ ইবনে খালদুন সমাজচিন্তার বিকাশের ক্ষেত্রে অনন্য অবদান রেখেছেন। অনেকের মতে তিনিই সমাজবিজ্ঞানের প্রকৃত জনক। কিন্তু ফরাসি সমাজচিন্তাবিদ অগাস্ট কোঁতকে সমাজবিজ্ঞানের জনক হিসেবে অভিহিত করা হয়। যেহেতু ১৮৩৯ সালে তিনিই প্রথম সমাজবিজ্ঞান শব্দটি ব্যবহার করেন।

কার্ল মার্কস উৎপাদন ব্যবস্থার পরিবর্তনের আলােকে সমাজব্যবস্থার পরিবর্তনের বিষয়ে ব্যাখ্যা করার প্রয়াস পেয়েছেন। তিনি তাঁর আলােচনায় নির্দিষ্ট একটি উৎপাদন ব্যবস্থার সাথে সম্পর্কিত একটি সমাজব্যবস্থাকে চিহ্নিত করেছেন। সমাজ বিকাশের ধারায় তাঁর উৎপাদন ব্যবস্থা বিষয়ক আলােচ্য স্তরগুলাে হলাে, আদিম সাম্যবাদী উৎপাদন পদ্ধতি (Primitive Communal Mode of Production); দাস উৎপাদন পদ্ধতি (The Slave Mode of Production); সামন্তবাদী উৎপাদন পদ্ধতি (The Feudal Mode of Production); পুঁজিবাদী উৎপাদন পদ্ধতি (The Capitalist Mode of Production), সমাজতান্ত্রিক উৎপাদন পদ্ধতি (The Socialistic Mode of Production) এবং সাম্যবাদী উৎপাদন পদ্ধতি (The Communist Mode of Production)। কার্ল মার্কসের উৎপাদন ব্যবস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ আলােচ্য বিষয় হলাে এশিয় উৎপাদন ব্যবস্থা (Asian Mode of Production)। এশিয় উৎপাদন ব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য অন্যান্য উৎপাদন ব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য থেকে আলাদা। এটি মূলত এমন একটি উৎপাদন ব্যবস্থা যা শুধু ভারতীয় উপমহাদেশেই লক্ষ্য করা গিয়েছিল। এ উৎপাদন ব্যবস্থার মূল বৈশিষ্ট্য ছিলাে স্বয়ংসম্পূর্ণ গ্রামীণ সম্প্রদায় বা Self Sufficient Village Community.

যুগে যুগে অনেক পর্যটক, পরিব্রাজক, যােদ্ধা, ধর্ম প্রচারক এই বঙ্গভূমিতে এসেছেন। যেমন- হিউয়েন সাং, আবুল ফজল, আলবেরুনি, ইবনে বতুতা প্রমুখ। তাঁদের লেখায় তকালীন বাংলার বিভিন্ন বিষয়ের বর্ণনা পাওয়া যায়। এদেশের অর্থনীতি, সমাজনীতি, কৃষি, শিল্প, সমাজের বৈচিত্র্য, সমাজ কাঠামাে, পরিবার, বিবাহ, জ্ঞাতি সম্পর্ক ইত্যাদি বিষয় নিয়ে
তাঁরা বর্ণনা করেছেন। তবে তাঁদের আলােচনায় সামাজিক প্রেক্ষাপট, সমাজকাঠামাে, সামাজিক স্তরবিন্যাস, শ্রেণি কাঠামাে ইত্যাদি বিষয় নিয়ে বিশদ বিবরণ পাওয়া যায় নি, যা সমাজবিজ্ঞান চর্চায় বিশেষ গুরুত্ব বহন করে।

ইংরেজদের হাতে নবাব সিরাজ-উদ-দৌলার পরাজয়ের পর ব্রিটিশ কোম্পানির শাসন ও ইংরেজদের ঔপনিবেশিক শাসনকালে বাংলার অর্থনীতি, সমাজনীতি, রাজনীতি, সমাজকাঠামাে ইত্যাদি ক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তন আসে। এই পরিবর্তনের ফলে ভারতীয় উপমহাদেশ তথা বাংলাদেশে সমাজবিজ্ঞান চর্চায় নতুন ধ্যান ধারণার তৈরি হয়। ১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর ১৯৫৬ সালে সমাজবিজ্ঞান একটি আলাদা বিষয় হিসেবে পঠন-পাঠন শুরু হয়। ১৯৪৭ এর দেশভাগ, ১৯৫২ এর ভাষা আন্দোলন এবং ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা লাভ সমাজবিজ্ঞান চর্চার আলাদা পটভূমি তৈরি করে। উপরের আলােচনার প্রেক্ষিতে বলা যায় যে, বাংলাদেশে সমাজবিজ্ঞান চর্চার পটভূমি খুব বেশি দিন আগে তৈরি হয়নি। বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক এবং অর্থনৈতিক পরিবর্তন এদেশে সমাজবিজ্ঞান চর্চার পটভূমি তৈরি করেছে।

বাংলাদেশে সমাজবিজ্ঞান পাঠের প্রয়ােজনীয়তা

সামাজিক জীব হিসেবে বাংলাদেশের মানুষের সামাজিক বিষয়াদি নিয়ে সমাজবিজ্ঞান আলােচনা করে। ফলে বাংলাদেশে এর পাঠের প্রয়ােজনীয়তা অপরিসীম। বাংলাদেশের মানুষ কীভাবে জীবন-যাপন করে, তাদের আচার-আচরণ, রীতি-নীতি সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান লাভ করার প্রয়ােজন রয়েছে। সামাজিক উন্নয়ন, সমাজ সংস্কারমূলক কার্যক্রম ইত্যাদি বিষয়ে জানার জন্য সমাজবিজ্ঞান পাঠের প্রয়ােজনীয়তা রয়েছে। নিম্নে বাংলাদেশে সমাজবিজ্ঞান পাঠের প্রয়ােজনীয়তা সম্পর্কে আলােচনা করা হলাে:

১. বাংলাদেশের সমাজের শ্রেণি কাঠামাে সম্পর্কে জানা : বাংলাদেশে বিভিন্ন শ্রেণি এবং পেশার মানুষ বাস করে।
এছাড়াও বিভিন্ন নৃতাত্ত্বিক জনগােষ্ঠীর বসবাসও এ অঞ্চলে রয়েছে। তাই এসব মানুষের শ্রেণি, তাদের পেশা, বৃত্তি, জীবন ধারণের উপায় ইতাদি বিষয়ে জানার জন্য সমাজবিজ্ঞান পাঠের প্রয়ােজনীয়তা রয়েছে।

২. বাংলাদেশের সমাজ সম্পর্কে জানা : বাংলাদেশের সমাজ সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করতে হলে সমাজবিজ্ঞান পাঠের বিকল্প  নেই। বাংলাদেশের সমাজ কোন ধরনের, বাংলাদেশের সমাজের ক্রমবিকাশ, বাংলাদেশের সমাজের বিবর্তন ধারা, বাংলাদেশের সমাজের ধরণ, সমাজ পরিবর্তনের ধারা, গ্রামীণ এবং শহুরে সমাজ, সমাজে কাঠামাে, বাংলাদেশের সামাজিক স্তরবিন্যাস, বর্ণপ্রথা ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কে অধিকতর জ্ঞান লাভের জন্য সমাজবিজ্ঞান পাঠ আবশ্যক।

৩. বাংলাদেশের মানুষ সম্পর্কে জানা : বাংলাদেশের মানুষের নৃতাত্ত্বিক পরিচয়, বাংলাদেশের মানুষের জীবনযাত্রা প্রণালী, মানুষের সংস্কৃতি, চিন্তা চেতনা, অনুষ্ঠান-প্রতিষ্ঠান, ধর্ম, আচার আচরণ, রীতিনীতি, পরিবর্তনশীল আচার
আচরণ এবং রীতিনীতি ইত্যাদি সম্পর্কে জানতে হলে সমাজবিজ্ঞান পাঠ আবশ্যক।

৪. বাংলাদেশের সমাজের গতি-প্রকৃতি সম্পর্কে জানা : বাংলাদেশের সমাজের গতি-প্রকৃতি এবং গতিধারা সম্পর্কে
জানতে, বাংলাদেশের সমাজের অতীত অবস্থান, বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ সম্পর্কে জানতে সমাজবিজ্ঞান পাঠের গুরুত্ব
রয়েছে।

৫. সামাজিক সম্পর্ক সম্বন্ধে জানা : বাংলাদেশের মানুষের সামাজিক সম্পর্ক, সম্পর্কের ধরন, পুঁজিপতি এবং পুঁজিহীনের
সম্পর্ক সম্বন্ধে জানতে হলে, সামাজিক সম্পর্কের প্রভাব সম্পর্কে এবং গতি প্রকৃতি জানতে বাংলাদেশে সমাজবিজ্ঞান পাঠের প্রয়ােজনীয়তা অপরিসীম।

৬. বাংলাদেশের সমাজের উন্নতি বিধান : সীমিত সম্পদ দিয়ে অসীম চাহিদা পূরণ করে কিভাবে সামাজিক উন্নতি সাধন
করা যায়, সমাজবিজ্ঞান সে সম্পর্কে জ্ঞান দান করে থাকে। তাই সমাজবিজ্ঞান অধ্যয়ন ব্যতীত বাংলাদেশের মানুষের
চাহিদা, ভােগ প্রভৃতি সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করা কখনও সম্ভব নয়।

৭. সামাজিক কার্যক্রম পরিচালনা : বাংলাদেশের মানুষের সামাজিক কার্যক্রম সম্পর্কে জানতে হলে সেগুলাে কিভাবে
পরিচালিত হয় সে সম্পর্কে বিস্তারিত জ্ঞান লাভ আবশ্যক। সমাজবিজ্ঞান পাঠের মধ্য দিয়েই সমাজকে সবচেয়ে
ভালােভাবে জানা সম্ভব।

৮. বাংলাদেশের সামাজিক সমস্যা সম্পর্কে জানা : অধিক জনসংখ্যা, ছােট্ট সীমানা, অসীম চাহিদা, সীমিত যােগান,
আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ইত্যাদি বিষয় বাংলাদশের প্রধানতম আলােচনার বিষয়। সমাজবিজ্ঞান পাঠ করলে এসব সামাজিক সমস্যাবলী চিহ্নিত করার সুযােগ হয়। তাই বাংলাদেশের যেকোনাে সামাজিক সমস্যার কারণ অনুসন্ধান
করতে হলে এবং এগুলাের সমাধানের পথ বের করতে হলে সমাজবিজ্ঞান পাঠ অত্যাবশ্যক।

উপযুক্ত আলােচনার সূত্র ধরে আমরা বলতে পারি যে, বাংলাদেশের মানুষের সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক, দলগত ইত্যাদি বিষয়ে জানতে হলে সমাজবিজ্ঞান পাঠের প্রয়ােজনীয়তা অনস্বীকার্য।

বাংলাদেশে সমাজবিজ্ঞানের বিকাশ

সামাজিক বিজ্ঞান হিসেবে সমাজবিজ্ঞান শাস্ত্রটির বিকাশ শুরু হয় ফরাসী মনীষী অগাস্ট কোঁত-এর হাত ধরে। সেইন্ট সাইমন দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে ১৮৩৯ সালে তিনিই প্রথম ‘Sociology শব্দটি ব্যবহার করেন। তবে তিনি প্রথমে একে। Social physics বা সামাজিক পদার্থবিদ্যা বলে অভিহিত করেছিলেন। পরবর্তীতে বিষয়টিকে Sociology বা সমাজবিজ্ঞান নামে নামকরণ করেন।

বাংলাদেশে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অংশ হিসেবে সমাজবিজ্ঞান চর্চার প্রাতিষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়। ১৯৪০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সিলেবাসে “Elements of Sociology” ও “Principles of Sociology” নামে দুটি কোর্স চালু করা হয়। এ বিষয়গুলাে পড়ানাের জন্য বিদেশের অনেক অতিথি অধ্যাপককে নিয়ে আসা হতাে। অতপর ১৯৫৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি আলাদা বিভাগ হিসেবে সমাজবিজ্ঞান যাত্রা শুরু করে। ১৯৫৭-১৯৫৮ শিক্ষাবর্ষে ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি শুরু হয়। এর আগে ১৯৫০ সাল থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক এ.কে নাজমুল করিম এবং অধ্যাপক অজিত কুমার সেন সমাজবিজ্ঞানকে একটি আলাদা বিভাগ হিসেবে চালু করার বিষয়ে কাজ শুরু করেন। একই বছর ফরাসি অধ্যাপক লেভি স্ট্রস গবেষণার কাজে পার্বত্য চট্টগ্রামে এসে সমাজবিজ্ঞান আলােচনার নতুন ক্ষেত্র খুঁজে পান। তিনি অধ্যাপক নাজমুল করিম এবং অজিত কুমার সেন এর সাথে বিষয়টি নিয়ে আলােচনা করেন। অধ্যাপক নাজমুল করিম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজবিজ্ঞানের প্রতিষ্ঠা করেন এবং তার হাত ধরেই সমাজবিজ্ঞানের যাত্রা শুরু হয়।

বাংলাদেশের সমাজবিজ্ঞান বিকাশে অধ্যাপক নাজমুল করিমের অনেকগুলাে গ্রন্থ রয়েছে, তার মধ্যে-“The Changing Society of India, Pakistan and Bangladesh” গুরুত্বপূর্ণ। তিনি তাঁর প্রবন্ধসমূহে সমাজতাত্ত্বিক পদ্ধতি, উন্নয়নের লক্ষ্য ও সামাজিক স্তরবিন্যাস সম্পর্কে যে মতামত প্রকাশ করেন তা বাংলাদেশের সমাজবিজ্ঞান বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে। এছাড়াও দেশি বিদেশি বিভিন্ন সেমিনার এবং সিম্পােজিয়ামে অনেক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন যা বাংলাদেশে সমাজবিজ্ঞান বিকাশে গুরুত্ব বহন করে। তাঁর এ প্রবন্ধগুলাের মধ্যে চেঞ্জিং প্যাটার্নস অব এন ইস্ট পাকিস্তান ফ্যামিলি, উইম্যান ইন দি নিউ এশিয়া, রিলিজিয়নস অ্যান্ড সােসাইটি ইন বাংলাদেশ, রিলিজিয়নস ইন অরিয়েন্টাল সােসাইটিজ ইত্যাদি উল্লেখযােগ্য।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজবিজ্ঞানের সাফল্যের ধারাবাহিকতায় ১৯৬৯ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং ১৯৭০ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে আলাদা বিষয় হিসেবে সমাজবিজ্ঞানের পঠন-পাঠন শুরু হয়। বর্তমানে বাংলাদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজবিজ্ঞানে স্নাতক, স্নাতকোত্তর ডিগ্রি প্রদান ছাড়াও উচ্চতর গবেষণা হিসেবে এম.ফিল, পিএইচডি কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত বিভিন্ন কলেজে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর পর্যায়ে সমাজবিজ্ঞান
অধ্যয়ন করা হয়। বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্মুক্ত ও দূরশিক্ষণ পদ্ধতিতে সমাজবিজ্ঞান বিষয়ে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর পর্যায়ে ডিগ্রি দেওয়া হয়।

এতএব বলা যায় যে,  বাংলাদেশের মানুষের পারস্পরিক সম্পর্ক, আচার আচরণ, মূল্যবােধ, সামাজিক দায়িত্ব ও কর্তব্য, সমাজ পরিবর্তনের গতি-প্রকৃতি, সামাজিক পরিবর্তন এবং সামাজিক উন্নতি বিধানে বিজ্ঞানভিত্তিক গবেষণা ও সমস্যা সমাধানের পথ খুঁজে পেতে সমাজবিজ্ঞানের বিকাশ শুরু হয়। বাংলাদেশে পরিবর্তনশীল সমাজ কাঠামাে, সামাজিক আচরণ, মূল্যবােধ ইত্যাদি পাঠে সমাজবিজ্ঞান প্রয়ােজনীয়তা অপরিহার্য।

প্রিয় ভিজিটর, এখানে উপস্থাপিত সকল তথ্য উপাত্ত অভিজ্ঞ লোক দ্বারা ইন্টারনেট থেকে সংগ্রহিত । উল্লেখিত কোন তথ্যের ভুল যদি আপনার নিকট দৃশ্যমান হয় তবে অতিসত্ত্বর তা আমাদের ইমেইলের ([email protected]) মাধ্যমে অবহিত করার জন্য অনুরোধ করছি।

১টি মতামত

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back to top button
error: কন্টেন্ট সংরক্ষিত !!